
প্রকাশিত: ৪ ঘন্টা আগে, ০৫:০১ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
দৈনিক বর্তমান দেশবাংলা :
পবিত্র আশুরা উপলক্ষে রাজধানীতে শিয়া সম্প্রদায়ের আয়োজনে শোকাবহ তাজিয়া মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তাবলয়ের মধ্য দিয়ে।
রোববার (৬ জুলাই) সকাল সাড়ে ১০টায় ৪০০ বছরের পুরনো ঐতিহাসিক হোসাইনি দালান ইমামবাড়া থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে ধানমন্ডি লেকে (অস্থায়ী কারবালা) গিয়ে শেষ হয় দুপুর আড়াইটায়।
হোসাইনি দালান ইমামবাড়ার সুপারিনটেনডেন্ট এম.এম. ফিরোজ হোসেন জানান, এবারের তাজিয়া মিছিল সাজানো হয়েছিল শোকের কালো ব্যানার, বেহেস্তা (লাল-সবুজ নিশান), পাঞ্জা, আলম, মাতম, দুলদুল ঘোড়া, খুনি ঘোড়া এবং একটি জারি তাজিয়া দিয়ে।
মিছিলটি উত্তর গেট থেকে বের হয়ে হোসাইনি দালান রোড, বকশীবাজার লেন, আলিয়া মাদ্রাসা রোড, গোর-এ-শহীদ মাজার মোড়, আজিমপুর, ইডেন কলেজ, নীলক্ষেত, সায়েন্সল্যাব, ধানমন্ডি ২ নম্বর রোড, বিজিবি গেট, সাত মসজিদ রোড হয়ে ধানমন্ডি লেকে গিয়ে শেষ হয়।
এবারের আয়োজনে বিশেষ নজর কাড়ে শিশুদের অংশগ্রহণ। এবারই প্রথম ঢাকার তাজিয়া মিছিলে শিশুদের মাধ্যমে ফল ও হালকা খাবার বিতরণের চিত্র দেখা যায়।
আজিমপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় শিশুরা নিজ হাতে কলা, পেয়ারা, শসা, ছোলা, কিসমিস, বাদাম, শরবত ইত্যাদি বিতরণ করে মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের মাঝে।
মিছিলে অংশ নেওয়া অধিকাংশ শোকানুরাগী ছিলেন কালো পোশাকে। কারো হাতে ছিল প্রতীকী ছুরি, আলম, নিশান, বইলালাম। মাতমের মাধ্যমে তারা স্মরণ করেন কারবালার শোক ও ইমাম হুসাইন (রা.)-এর আত্মত্যাগ।
ইমামের আত্মত্যাগের মহিমা তুলে ধরতেই এ আয়োজন, যা শিয়া সম্প্রদায়ের জন্য এক গভীর শোক ও ধর্মীয় আবেগে পূর্ণ দিন।
আশুরা উপলক্ষে মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় শনিবার (৫ জুলাই) সন্ধ্যা থেকেই। মাগরিবের নামাজের পর হোসাইনি দালানে খুতবা পাঠ ও আশুরার তাৎপর্য নিয়ে বয়ান করা হয়। রাতজুড়ে চলে দোয়া-মোনাজাত। ভক্তরা গিলাফে প্রতীকি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ইমাম হুসাইন (রা.)-এর প্রতি।
এর আগে শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিটে প্রথম মিছিল এবং শনিবার রাত ২টায় দ্বিতীয় মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
শুধু পুরান ঢাকার হোসাইনি দালান নয়, রাজধানীর বড় কাটরা, মোহাম্মদপুর বিহারী ক্যাম্প, শিয়া মসজিদ, বিবিকা রওজা, মিরপুর পল্লবী বিহারী ক্যাম্পসহ বিভিন্ন এলাকাতেও পবিত্র আশুরা পালন করা হয় যথাযোগ্য ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে।
তাজিয়া মিছিল উপলক্ষে রাজধানীতে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। পুলিশের পাশাপাশি র্যাব, সেনাবাহিনী, সোয়াট, ফায়ার সার্ভিস ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের সক্রিয় উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।
মিছিলের অগ্রভাগ, মধ্যভাগ ও পশ্চাদভাগে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেন। রাস্তায় যানবাহন নিয়ন্ত্রণে ছিল ট্রাফিক পুলিশও।
মুসলিম উম্মাহর জন্য আশুরা এক শোকাবহ স্মৃতি। ৬১ হিজরির ১০ মহররম কারবালার প্রান্তরে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর দৌহিত্র ইমাম হুসাইন (রা.) নির্মমভাবে শহীদ হন। সেই আত্মত্যাগ স্মরণে প্রতিবছর শিয়া সম্প্রদায় আয়োজন করে তাজিয়া মিছিল।
এবারের আয়োজনে দেখা গেছে ধর্মীয় আবেগ, সামাজিক সহমর্মিতা ও শিশুর মমতার এক ব্যতিক্রমধর্মী মিলনমেলা।
মন্তব্য করুন