প্রকাশিত: ২ ঘন্টা আগে, ০৫:০৮ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

বেনাপোল চেকপোস্টে ভারতীয়দের  বৈধ ভিসায় অবৈধ কারবার

 

আনোয়ার হোসেন নিজস্ব প্রতিনিধিঃ

বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন  দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছেন ভারত থেকে শত শত নাগরিক প্রতিদিন বিজনেস ভিসায় । অথচ বাংলাদেশিদের 

ভারত সরকার বিজনেস ও টুরিশ ভিসা কার্যত বন্ধ করে রেখেছে। কেবল মেডিক্যাল ও স্টুডেন্ট ভিসা ছাড়া অন্ন ভিসা পাওয়া যাইনা।

বাংলাদেশ পাসপোর্টধারীরা সীমিত সংখ্যক মেডিকেল ভিসা নিয়ে ভারতে প্রবেশ করতে পারলেও বিপরীতে ভারতীয় নাগরিকরা বিজনেস ও টুরিশ ভিসায় প্রতিদিন বেনাপোল সকালে এসে ঘুরে বিকেলে ফিরে যাচ্ছে। এমন চিত্র প্রতিদিন দেখা যায় বেনাপোল ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, এসব ভারতীয় যাত্রীরা বিজনেস ভিসায় বাংলাদেশে প্রবেশ করে কম্বল, মোবাইল ফোন, বিদেশি মদ-বিয়ার, শাড়ি, থ্রিপিস, ফুচকা, চকোলেট, কসমেটিকস অবৈধ চুরায় ডলার ঔষুধ  প্রভৃতি সামগ্রী এনে বেনাপোল চেকপোস্টসংলগ্ন দোকানে বিক্রি করছেন। এরপর নগদ টাকা হাতে নিয়েই সীমান্ত পেরিয়ে ফেরত যাচ্ছে ভারতে । এসব যাত্রীদের স্থানীয়ভাবে ‘ল্যাগেজ পার্টি’ নামে ডাকা হয়।

 

বেনাপোল ও আশপাশের যশোর, খুলনা অঞ্চলের শত শত মানুষ প্রতিদিন ট্রেনে চড়ে এই চোরাচালান সামগ্রী কিনতে আসে সকাল বেলা । উভয় দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নীরব সহযোগিতায় এই কর্মকাণ্ড দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে।

এই অবৈধ কার্যক্রমে দেশীয় শিল্প পড়ছে হুমকিতে। শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আসা বিপুল পরিমাণ পণ্য প্রতিদিন দেশের বাজারে প্রবেশ করায় সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। অথচ সাধারণ বাংলাদেশি পাসপোর্টযাত্রীরা সীমান্তে পণ্যসহ প্রবেশ করতে গিয়ে চরম হয়রানির শিকার হচ্ছেন।

একই সীমান্তে, যেখানে সাধারণ যাত্রীরা সামান্য পণ্য নিয়েও বারবার স্ক্যানিং ও তল্লাশির মুখোমুখি হচ্ছেন, সেখানে ল্যাগেজ পার্টিরা দিনের পর দিন অবাধে চোরাচালান চালিয়ে যাচ্ছে।

চেকপোস্ট সূত্রে জানা গেছে, চলতি ১ থেকে ৩১ মে পর্যন্ত মাত্র এক মাসে ২৫ হাজার ৬৭৮ ভারতীয় পাসপোর্টধারী যাত্রী বেনাপোল দিয়ে যাতায়াত করেছেন। এর মধ্যে ভারত থেকে এসেছেন ১২ হাজার ১১২ জন এবং ভারতে ফিরে গেছেন ১৩ হাজার ৫৬৬ জন। এসব যাত্রীর মধ্যে প্রায় ২৪ হাজারই বিজনেস ভিসাধারী এবং এদের অধিকাংশই চোরাচালানের সঙ্গে যুক্ত  রয়েছে বলে ধারণা করা যায়।

 

শুল্ক বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, ‘আমরা বিষয়টি নিয়ে সজাগ। যাত্রী হয়রানি রোধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তবে অনেক যাত্রী মালামাল আটক হওয়ার পর কাস্টমস হাউজ থেকে শুল্ক দিয়ে ডি এম করা মালামাল ছাড় করিয়ে নিচ্ছেন ভারতীয় পাসপোর্টধারী যাত্রীর যোগ সাজোসে একটি মহল ।

৪৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী বলেন, ‘সীমান্তে চোরাচালান বন্ধে আমরা দিন-রাত কাজ করছি। প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ অবৈধ মালামাল আটক করা হচ্ছে। টাস্কফোর্সের মাধ্যমে অভিযানও চালানো হয়।

তিনি আরও বলেন, ‘চোরাকারবারীরা শুল্ক ফাঁকি দিয়ে দেশীয় বাজারকে বিপন্ন করছে। এতে দেশীয় শিল্প যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি সরকারও রাজস্ব হারাচ্ছে কটা কটি টাকা।

কলকাতাস্থ বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশন থেকে কীভাবে এই বিপুল সংখ্যক ভারতীয় চোরাচালান কারবারি গন অনায়াসে বিজনেস ভিসা পাচ্ছে, এ প্রশ্ন এখন সীমান্তজুড়ে। অথচ বাংলাদেশি নাগরিকরা প্রতিনিয়ত মেডিক্যাল ভিসা না পেয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন।

সীমান্তে চোরাচালান রোধে কঠোর নজরদারি ও বিজনেস ভিসা নীতিমালা পুনর্বিবেচনার দাবি তুলেছেন সাধারণ যাত্রী ও ব্যবসায়ী মহল। বেনাপোল সীমান্ত যেন আর ল্যাগেজ পার্টিদের অবাধ যাতায়াতের কেন্দ্র না থাকে, এটাই এখন সচেতন জনগণের  প্রত্যাশা।ট

মন্তব্য করুন