
প্রকাশিত: ৩ জুলাই, ২০২৪, ০৯:০৬ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় রাজনৈতিক ছত্র-ছায়ায় ও জনপ্রতিনিধিদের নেতৃত্বে বেড়েই চলেছে রমরমা মাদক ব্যবসা ও জুয়া আসর। মাদক ব্যবসা থেকে বাদ পড়েনি নারী-পুরুষ কেউই। উপজেলার পাড়া-মহল্লায় অনেকটা খোলামেলা ভাবেই চলছে মাদক বেচাকেনা ও জুয়ার আসর। কাঁচা অর্থের লোভে কিশোর-যুবকরা জড়িয়ে পড়ছে এসব ব্যবসায়। বিপথগামী হচ্ছে যুব সমাজ। ফলে পরিবার ও সমাজে বিশৃঙ্খলা নেমে আসছে। প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরা মাঝে-মধ্যে অভিযান পরিচালনা করে ছিচকে মাদক ব্যবসায়ী ও জুয়াড়ীদের আটক করলে, মূল মাদক ব্যবসায়ী ও জুয়ার আসরের আয়োজকরা রয়ে যাচ্ছে ধরা ছোয়ার বাইরে। যার কারণে থামানো যাচ্ছেনা মাদক ও জুয়ার আসর সমুহ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলায় মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত মাদক সেবনকারী ও জুয়া খেলায় জড়িতদের দেয়া তথ্যমতে জানা গেছে, বর্তমানে সবচেয়ে বেশি কেনা-বেচা হচ্ছে চা-বাগানের দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরী চোলাই মদ। এছাড়া উপজেলার ইসলামপুর ও কুলাউড়ার চাতলাপুর সীমান্ত দিয়ে অবাধে ভারত থেকে অবৈধ পথে আসে ইয়াবা, ফেনসেডিল, হুইসকি, অফিসার চয়েস, রাম, বিয়ার ও ভটকা।
সরেজমিনে ঘুরে জানা যায়, উপজেলার ২২টি চা-বাগানে বৈধ মদের পাট্টা রয়েছে। এইসব পাট্টায় মাদক সহজ লভ্য হওয়ার কারণে বাগানের শ্রমিকদের পাশাপাশি বস্তি এলাকার উঠতি বয়সের যুবকরা মাদকের দিকে ধাবিত হচ্ছে। চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে এক শ্রেণীর সুযোগ সন্ধানীরা পাত্রখোলা, মাধবপুর, ফুলবাড়ী, আলীনগর, মদনমোহনপুর, চাতলাপুর, শমশেরনগর, দেওড়াছড়া ও কানিহাটি চা-বাগান সমুহে নিজেদের বসত বাড়ীতেই গড়ে তুলেছেন চোলাই মদের কারখানা ও অবৈধ পাট্টা। এছাড়া মাদক বেচাকেনাসহ ও জুয়ার আসর চলে উপজেলার সদর ইউনিয়নের ছাতকছড়া গ্রামের রেনুর দোকানের পাশে, মাধবপুর ইউনিয়নের বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান সড়কের ধারে অবস্থিত মসজিদের পাশে, কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের ফুলবাড়ী চা-বাগানের এক মহিলার বাড়ীতে, পশ্চিম কুমড়া কাপন ও দক্ষিণ কুমড়া কাপনের দুটি বাড়িতে ইয়াবা ও ভারতীয় মাদক বিক্রি করা হয়। এছাড়া ভ্রাম্যমান ভাবে কমলগঞ্জ পৌরসভার কমলগঞ্জ মডেল হাইস্কুলের সম্মুখে, নতুন ধলাই ব্রীজের পাশে, উপজেলা পরিষদ কিন্ডার গার্ডেনের সম্মুখে ইয়াবা ও গাঁজা বিক্রি হয়। এছাড়া কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের রানীর বাজারস্থ ধলাই নদীর পাড় সংলগ্ন শ্মাশানে নিয়মিত সন্ধ্যার পর যুবকরা জড়ো হয়ে মাদক সেবন করে। অপরদিকে শমশেরনগর ইউনিয়নের শিংরাউলী গ্রামের একটি বাড়ীতে ও আলীনগর ইউনিয়নের একটি বাড়ীতে, কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের লংগুরপাড় গ্রামে ধলাই নদীর পাড়ে নিয়মিত জুয়ার আসর বসে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলার বিভিন্ন এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, আমার প্রতিবাদ করতে গেলে বিভিন্ন ভাবে হুমকি দেয়। তারা প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই মাদক ব্যবসা ও জুয়া আসর পরিচালনা করছে। এ বিষয়ে অভিযোগ দিয়ে কোন লাভ হবে না। আশেপাশের প্রায় সব গ্রামে মাদক বিক্রি হয়। আমাদের সন্তানদের নিয়ে খুবই দুশ্চিন্তায় আছি।
এব্যাপারে কমলগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাইফুল আলম বলেন, অবাধে মাদক ও জুয়ার আসর চলার কোন সুযোগ নেই। জুয়া ও মাদকের ব্যাপারে আমরা সোচ্চার। জুয়া ও মাদক বন্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। পুলিশী অভিযানে মাদকসহ বিক্রেতা আটক হলেও আদালত থেকে জামিনে বেরিয়ে আবার মাদক ব্যবসা শুরু করে।
মন্তব্য করুন