প্রকাশিত: ৬ ঘন্টা আগে, ০৩:১৫ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

নির্বাচন নিয়ে দেশের রাজনীতিতে ফের উত্তাপ

সদরুল আইনঃ

নির্বাচন সামনে রেখে দেশের রাজনীতিতে ফের উত্তাপ। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে বলা হচ্ছে, রোজার আগেই জাতীয় নির্বাচন হতে পারে।

 এরইমধ্যে নির্বাচন কমিশনকে ভোটের প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে—বিশেষত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে ডিসেম্বরের মধ্যেই প্রস্তুতি চাওয়া হয়েছে।

এই প্রেক্ষাপটে নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অবস্থান পর্যালোচনা করা হচ্ছে। জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান সম্প্রতি একটি জনসভায় বক্তব্য দিয়ে বলেন, “লালমনিরহাটের পাটগ্রাম থানায় বিএনপি নেতাকে ছিনিয়ে নেয়ার মতো ঘটনায় প্রমাণ হয় দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নেই।”

অন্যদিকে, জাতীয় নাগরিক কমিটি (এনসিপি) এখন মাঠে রয়েছে পদযাত্রা কর্মসূচি নিয়ে। দলটির নেতারা একাধিকবার বলছেন, ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ এবং ‘মৌলিক সংস্কার’ ছাড়া তারা নির্বাচনে যাবে না।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের প্রেক্ষাপটে বিএনপি নির্বাচন নিয়ে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ দাবি করে আসছে।

প্রধান উপদেষ্টা যেখানে ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের কথা বলছেন, বিএনপি সেখানে ডিসেম্বরেই নির্বাচন চায় বলে শুরুতে জানায়। তবে পরে তারেক রহমানের সঙ্গে আলোচনার পর ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনেও তারা একমত হয়।

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, “আমরা ডিসেম্বর থেকে জুন সময়সীমার পক্ষে ছিলাম। এখন বলছি—ডিসেম্বর থেকে এপ্রিলের মধ্যে নির্বাচন হওয়া উচিত। এটা কোনো অবস্থান পরিবর্তন নয়, বরং বাস্তবতা বিবেচনায় সময়সীমা সংকুচিত করার প্রস্তাব।”

তবে তিনি প্রশ্ন তোলেন, “নির্বাচন হলে কে করবে? ভোটার তালিকা আপডেট হয়নি, প্রশাসন এখনো রাজনৈতিকভাবে পক্ষপাতদুষ্ট, ডিসি-এসপি-ইউএনও পদে নিরপেক্ষ লোক বসানো হয়নি। এ অবস্থায় লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কিভাবে নিশ্চিত হবে?”

তাহের আরও অভিযোগ করেন, “নির্বাচনের আগে মৌলিক সংস্কারে ঐকমত্য গঠনের পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হচ্ছে। কোনো কোনো রাজনৈতিক দল এই সংস্কার প্রশ্নে নিরুৎসাহ করছে।”

এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসাইন বলেন, “শুধু সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য নয়, দেশে সত্যিকারের পরিবর্তন আনতে হবে। মৌলিক সংস্কার বাস্তবায়ন ছাড়া নির্বাচন অর্থহীন।”

তিনি মনে করেন, “কিছু দল সংস্কার প্রশ্নে পেছনের দরজা দিয়ে দরকষাকষি করছে। কেউ কেউ বলছে, সংস্কার পরবর্তী সরকারের কাজ—এটা চলতে থাকলে নতুন রাজনৈতিক প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষা পূরণ হবে না।”
এ প্রসঙ্গে বিএনপির দিকেই ইঙ্গিত করছেন জামায়াত ও এনসিপির নেতারা।

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “সত্তর অনুচ্ছেদ, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ—এসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আমরা সংশোধনী দিয়েছি। আমরা যৌক্তিক প্রস্তাবে একমত হচ্ছি। 

কিন্তু এমন কিছু প্রস্তাব আছে, যেগুলো গ্রহণ করলে রাষ্ট্র পরিচালনায় ভারসাম্য নষ্ট হবে—সেসব বিষয়ে একমত হওয়া যৌক্তিক নয়।”

তিনি মনে করেন, এনসিপি বা জামায়াতের বক্তব্য অনেকটা রাজনৈতিক দরকষাকষির অংশ। বলেন, “এগুলো মাঠের বক্তব্য, আলাপ-আলোচনার টেবিলে আবার ভিন্ন অবস্থান দেখা যায়।”

নির্বাচন নিয়ে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি তিন দলই বিভিন্ন মাত্রায় শর্ত ও সময়সীমা তুলে ধরছে। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড, প্রশাসনের নিরপেক্ষতা এবং মৌলিক সংস্কার—এই তিনটি ইস্যুই এখন মূল বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু। 

যদিও বিভিন্ন দলের ভাষ্য আলাদা, নির্বাচনকাল ঘনিয়ে এলে এসব অবস্থানে আরও গতি ও পরিবর্তন আসতে পারে বলে ধারণা বিশ্লেষকদের।

মন্তব্য করুন