প্রকাশিত: ১৫ ঘন্টা আগে, ০৯:১৩ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ কাম্য নয়

 

এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়াঃ

এ অঞ্চলেরর পারমাণবিক শক্তিধর দুই প্রতিবেশী ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার ক্রমবর্ধমান উত্তেজনায় যুদ্ধ বেধে যাওয়া ও হতাহতের ঘটনায় নানা হুমকি তৈরি হয়েছে। এর বাইরে আরও বড় বিপদ রয়েছে। অর্থনীতি, বাস্তুসংস্থান ও পরিবেশের যে বিপর্যয় ডেকে আনবে, তাতে যে দেশই নিজেদের বিজয়ী বলে দাবি করুক না কেন, ক্ষয়-ক্ষতির ফলে স্থায়ী ক্ষত সৃষ্টি হবে। এখন সময় হয়েছে, দুই দেশের যুদ্ধংদেহী উত্তেজনা বন্ধ করা ও সংকট সমাধানের পথ বের করা।

কাশ্মীরে ঘটে যাওয়া বর্বরোচিত সন্ত্রাসী হামলা ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক সংকট তৈরি করেছে। দেশ দুটিই এখন যুদ্ধংদেহী অবস্থায়। গত দুই দশকের মধ্যে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ঘটা সবচেয়ে ভয়াবহ এই সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত-পাকিস্তান একে অপরের বিরুদ্ধে নানা ধরনের পাল্টাপাল্টি ব্যবস্থা নিচ্ছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে রাজনৈতিক পর্যায়ে প্রতিদিনই তৈরি হচ্ছে পাল্টাপাল্টি বয়ান।

হাদিস ও ইসলামী ইতিহাস থেকে যেসব ভবিষ্যদ্বাণী পাওয়া যায়, তার মধ্যে শেষ জামানার যুদ্ধ সম্পর্কেও রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ বাণী পাওয়া যায়। শেষ সময়ে বা শেষ জামানায় বিভিন্ন দেশগুলোর মধ্যে সংঘর্ষের বা যুদ্ধের আলোচনা কিছু হাদিসে এসেছে, যদিও সেগুলোতে সরাসরি কোনো দেশের নাম উল্লেখ নেই। হাদিসে রাসুলে এই ধরনের ভবিষ্যদ্বাণী রয়েছে যে, দক্ষিণ এশিয়ার অঞ্চলে অন্তত একটি বড় ধরনের সংঘর্ষ হবে, যা সমগ্র মুসলিম উম্মাহর উপর প্রভাব ফেলবে। কিছু বিশেষজ্ঞের মতে, ভারত ও পাকিস্তানের যুদ্ধ রাসুল (সা.)-এর ভবিষ্যদ্বাণী থেকে বেরিয়ে আসা ধারণার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর বক্তব্যের মূল বিষয় হলো, এ ধরনের যুদ্ধে মুসলমানদের একসাথে থাকতে হবে এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য আশা করতে হবে।

ভারত-পাকিস্তানের এই যুদ্ধের দামামার মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিন স্থিতিশীল দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক শান্তি প্রক্রিয়ার একধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ যেহেতু এই আঞ্চলিক রাজনীতির অন্যতম প্রধান অংশিদার সেহেতু প্রশ্ন হলো এই উত্তেজনামূলক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের করণীয় কি হওয়া উচিত ? ভারত-পাকিস্তানের এই যুদ্ধ পরিস্থিতি এই অঞ্চলে নতুন নয়। ইতিহাসের পাতা উল্টালে দেখা যাবে এই ধরনের পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সবসময় দক্ষ, বুদ্ধিমান ও দায়িত্বশীল অংশীদারির ভূমিকা পালন করে এসেছে এবং সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব বিবদমান পক্ষের ওপর ন্যস্ত করে সমস্যার সমাধান আরও গতিশীল রেখেছে। ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্বে বাংলাদেশের মূল অস্ত্র ছিল ‘বিশ্বাসযোগ্য নিরপেক্ষতা’। বাংলাদেশের বৈদেশিক নীতির মূলমন্ত্র ‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারও সাথে বৈরিতা নয়’ ছিল এই নিরপেক্ষতার চালিকা শক্তি। ফলে, আঞ্চলিক এই দ্বন্দ্বের মধ্যেও আঞ্চলিক পর্যায়ে অবাধ বিচারণে বাংলাদেশের কোন সমস্যায় পড়তে হয়নি। কারণ এই নিরপেক্ষতা সবপক্ষের আস্থা অর্জনের মধ্য দিয়ে সম্ভব হয়েছে।

কিন্তু জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বাংলাদেশের কূটনৈতিক ক্ষেত্রে অনেক পরিবর্তন ঘটেছে বলে মনে করছেন অনেকেই। পাকিস্তানের কূটনৈতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের সঙ্গে নতুন করে ঘনিষ্ঠতা সৃষ্টি হয়েছে, ফলে চলমান পরিস্থিতিতে কিছুটা অস্বস্তিকর পরিবেশ বিরাজহ করছে। স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসেবে কোন দেশ কোন দেশের সঙ্গে কী ধরণের সম্পর্ক তৈরি করবে সেই অধিকার প্রতিটি দেশের রয়েছে। কিন্তু আঞ্চলিক বা আন্তর্জাতিক পরিপেক্ষিতে অনেক ক্ষেত্রে সেই চর্চায় কৌশলী হতে হয়। আর আঞ্চলিক বা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অস্থিতিশীলতা তৈরির আশঙ্কা তৈরি হলে পা ফেলতে আরো বেশী কৌশলী হকে হয়। কারণ এই ধরনের পরিস্থিতিতে বিবদমান পক্ষের অন্যতম লক্ষ্য থাকে দল ভারি করা। নানা ফাঁদ ও লোভনীয় প্রস্তাবের মাধ্যমে বিবদমান পক্ষ তাদের পক্ষের দল ভারী করতে সচেষ্ট হয়। দলে ভিড়তে বাধ্য করে। ভারত-পাকিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতিতে সেই ধরনের কোনো প্রচেষ্টা হলে অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না।

আল জাজিরাসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মিডিয়ার দেয়া তথ্য থেকে জানা যায়, ইতিমধ্যে অনেক নাটকীয়তার পর পাক-ভারত যুদ্ধ শুরু হলো। ভারত পাকিস্তানে আক্রমণের ৫ মিনিটের মধ্যেই পাকিস্তান পাল্টা আক্রমণ শুরু করে। এটি যুদ্ধের ইতিহাস এক বিরল ঘটন!
.
হামলা পাল্টা হামলার পরপর উভয় দেশের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে ভারত হামলা করে হাড়ে হাড়ে বুঝতে পেরেছে কি যে ভুল করেছে। ভারত অতিদ্রুত প্রতিআক্রমণের শিকার হবে, তা আশা করেনি। মিডিয়ার তথ্যানুযায়ী পাক বাহিনী ভারতের দুটি যুদ্ধবিমান, ১টি হেলিকপ্টার, ৪টি নজরদারী ড্রোন ধ্বংস করেছে। ২২ ভারতীয় সেনা মারা গেছে। তবে পাকিস্তান ব্লুমবার্গকে জানিয়েছে যে, তারা ৫টি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ধ্বংস করেছে এবং কিছু ভারতীয় সেনাকে গ্রেফতার করেছে। ভারত পাকিস্তানের ১টি এফ১৬ যুদ্ধ বিমান ধ্বংস করেছে। ৭ পাক সেনা ও এক শিশু মারা গেছে। ভারত হামলা চালিয়েছে তিন জায়গায় ৯ বার, পাকিস্থান হামলা চালিয়েছে ৫ জায়গায় ১৫ বার। ভারত শহীদ করেছে একটি মসজিদ। পাকিস্তান ধ্বংস করে শ্রীনগরের ভারতীয় এক এয়ারবেইজ। ভারত ৯টি ব্যালিস্টিক মিসাইল ছুড়েছে, পাকিস্তান ক্রুজ ও ব্যালিস্টিক ১৫টি ছুড়েছে। ভারত পাকিস্তানের একটি বাড়ি ধ্বংস করেছে, পাকিস্তান ৪টি ভারতীয় সেনা ছাউনি ধ্বংস করেছে। ভারতীয়রা পাক সীমান্তের অভ্যন্তরে ঢুকতে পারেনি। তবে দেড় শতাধিক পাক সেনা জম্মুর ভিতরে প্রবেশ করে স্থালাভিযান শুরু করেছে।

ইতিমধ্যে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস গত ৩০ এপ্রিল বাংলাদেশ বিমান বাহিনী আয়োজিত ‘আকাশ বিজয়’ মহড়া শেষে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি রীতিমতন যুদ্ধের প্রস্তুতি নেওয়ার কথাই বলে দিয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য, ভারত-পাকিস্তান পরিস্থিতির মধ্যে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি না নেওয়াটা ‘আত্মঘাতী’ এবং প্রস্তুতি নিতে হলে ‘আধাআধি প্রস্তুতি’র কোনো জায়গা নেই।- এ বক্তব্যের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের জনগন ও সশস্রবাহিনীকে ম্যাসেজ দিয়েছে বলে অনেকেই মনে করেন। অবশ্য একই বক্তব্যে নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস নিজেকে একজন যুদ্ধবিরোধী মানুষ বলে ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেছেন, “অনেকের মতো আমিও যুদ্ধবিরোধী মানুষ। পৃথিবীতে যুদ্ধ হোক, এটা কামনা করি না। যুদ্ধ প্রস্তুতি অনেক সময় যুদ্ধের দিকে নিয়ে যায়। কাজেই যুদ্ধ প্রস্তুতি নিয়েও একটা ঘোরতর আপত্তি। কিন্তু এমন বিশ্বে আমরা বাস করি, প্রতিনিয়ত যুদ্ধের হুমকি আমাদের ঘিরে থাকে। সেখানে প্রস্তুতি না নিয়ে থাকাটা অসম্ভব হয়ে পড়ে।”

ভারত-পাকিস্তানের সংঘাতে যে বিপুল অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়, সেই ইতিহাস সংযত হওয়ার শিক্ষা দেয়। ১৯৯৯ সালে খুব সীমিত পরিসরে মাত্র কয়েক দিন স্থায়ী কারগিল যুদ্ধে ভারত ও পাকিস্তানের পুঁজিবাজারে ধস নেমেছিল। বাজার পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হলেও বৈরিতা দীর্ঘদিন ধরে চলায় অর্থনৈতিক প্রভাব পড়েছিল মারাত্মক। পরবর্তী অর্থবছরে পাকিস্তানের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ২ শতাংশ থেকে কমে ৩ দশমিক ১ শতাংশে গিয়ে পৌঁছেছিল। ২০১৯ সালে পুলওয়ামা সংঘাতের সময় আমরা দেখেছি, মাত্র এক সপ্তাহের উত্তেজনায় দুই দেশের পুঁজিবাজারে ক্ষতির পরিমাণ ১২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছিল। এখন যদি সর্বাত্মক যুদ্ধ বেধে যায়, তাহলে ধ্বংসযজ্ঞ আরও অনেক বেশি হবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দক্ষিণ এশিয়ার এই দুই দেশের মধ্যকার চলমান উত্তেজনার প্রভাব বাংলাদেশসহ পুরো অঞ্চলেই পড়বে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশকে অবশ্যই সর্তক অবস্থানে থাকতে হবে বলে। কাশ্মীরে যখনই কিছু হয়, ভারত পাকিস্তানকে দায়ী করে। আবার বেলুচিস্তানে কিছু হলে পাকিস্তান ভারতকে দায়ী করে। উভয় ক্ষেত্রেই তারা পাল্টাপাল্টি কিছু ব্যবস্থা নেয়। এখন কথা হচ্ছে, এই পাল্টাপাল্টি ব্যবস্থা কোথায় গড়াতে পারে?  তারা আরো মনে করেন, এই দুদেশের মধ্যে বড় আকারে যুদ্ধের সম্ভাবনা তেমন নেই। দুটো দেশেরই পারমাণবিক সক্ষমতা আছে। কিন্তু তাদের জনগণ বড় ধরনের যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত বলে মনে করি না। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বলব, তারা বড় যুদ্ধে জড়াবে না। হয়তো পাল্টাপাল্টি ওই সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে।

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের শেষ পরিণতি নির্ভর করবে যুদ্ধ কতটা বিস্তৃত হয়, তা পারমাণবিক পর্যায়ে গড়ায় কি না, এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপের মাত্রার ওপর। তবে এই যুদ্ধ সংগঠিত হলে মানবিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ব্যপক বিপর্যয় ঘটবে। মানবিক বিপর্যয়ে ফলে বড় আকারের প্রাণহানি, উদ্বাস্তু সংকট, এবং নাগরিক জীবনের ব্যাপক ক্ষতি হতে বাধ্য। উভয় দেশের অর্থনীতি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যুদ্ধ দীর্ঘ হলে তা শুধু ভারত-পাকিস্তান নয়, সমগ্র দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের অর্থনীতিকে প্রভাবিত করবে। ফলে অর্থনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হবে। চলমান অবস্থায় যদি কোন এক পক্ষ স্পষ্ট বিজয় অর্জন করে, তাহলে সীমান্তে পরিবর্তন বা নিয়ন্ত্রণে পরিবর্তন হতে পারে, বিশেষ করে কাশ্মীর নিয়ে।

ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার উত্তেজনার প্রভাব বাংলাদেশেও পড়বে বলে মনে করেন বিশেজ্ঞরা। কারণ, উপমহাদেশের যেকোনো ঘটনার প্রভাব স্বাভাবিকভাবেই পার্শ্ববর্তী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের ওপর থাকে এবং দেশের নাগরিকদের মধ্যেও এর নানাবিধ প্রতিক্রিয়া হয়। এই উত্তেজনার কারণে উপমহাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিও আরেকটু জটিল হলো। এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে প্রথমেই ভারত একটা আন্তর্জাতিক চুক্তি (সিন্ধু পানি চুক্তি) স্থগিত করেছে। ভারতের দিক থেকে এটা আন্তর্জাতিক আইনেরও লঙ্ঘন হলো। অন্যদিকে ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির তথা আগামী বছর বিজেপি বিহার ও পশ্চিমবাংলার ক্ষমতায় আসার জন্য যে জনমতটা তৈরি করতে চাচ্ছে, তার জন্য মুসলমানবিরোধী রাজনীতির দিকে এগোচ্ছে। এটা বাংলাদেশের জন্য জটিলতা বাড়াবে। কারণ মাত্রই জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ভেতর দিয়ে এসেছে দেশটি।

এসব সম্ভাব্য বিপর্যয় ও পরিণতির কথা বিবেচনা করে বিশ্ব সম্প্রদায়কে তাদের নিষ্ক্রিয় উদ্বেগ দেখানোর জায়গা থেকে সরে এসে ইসলামাবাদ ও দিল্লির ওপর সক্রিয় হস্তক্ষেপ ও কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাবকে কাজে লাগাতে হবে। দুই দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের নিরাপত্তা সম্পর্ক রয়েছে এবং সেনাবাহিনীর সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার অনন্য সক্ষমতাও রয়েছে। বাংলাদেশের প্রতি দিল্লির যে দৃষ্টিভঙ্গি, সেখানে কূটনৈতিক কোনো সহনশীলতা যেমন নেই, তেমনি কোনো দূরদৃষ্টিও নেই। ফলে এটা বাংলাদেশকে অনিশ্চিত পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে দিবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। এই যুদ্ধ বন্ধে এখনই জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ও অন্যান্য পরাশক্তির চাপ প্রয়োগ করতে হবে। এখানে বাংলাদেশ তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। বাংলাদেশের পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতির কারণ হতে পারে। অতএব, বাংলাদেশকে একটি ভারসাম্যপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করা উচিত, যাতে আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় থাকে।

এখন বাংলাদেশের উচিত ওআইসিসহ অন্যান্য ফোরামগুলোকে বলা যে, কাশ্মীর ইস্যুটা স্থায়ীভাবে সমাধান করা উচিত। তাহলে এই অঞ্চলে উত্তেজনার উৎসটা বন্ধ হবে। এই মুহূর্তেই বাংলাদেশকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাটা রাখতে হবে, শুধু দর্শক হয়ে থাকলে হবে না। আন্তর্জাতিক পরিসরে সক্রিয়ভাবে ভয়েস রেইজ করতে হবে। আমি বলব আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলাদেশের উচিত ভাবমূর্তিটা এমনভাবে তৈরি করা যে, ভারত-পাকিস্তানের দ্বন্দ্বের মধ্যে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপের নিরাপত্তা ক্ষুণ্ণ হওয়ার শঙ্কা তৈরি করছে। অন্যদিকে ভারত-পাকিস্তানের চলমান উত্তেজনা সাম্প্রদায়িক রূপ নেওয়ার ব্যাপারটিও গভীরভাবে পর্যক্ষেন করতে হবে সরকারকে। গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হবার পর থেকেই ভারতে বাংলাদেশ সম্পর্কে এক ধরনের নেতিবাচক প্রচারণার বিষয় লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখন এই উত্তেজনা ঘিরে সেটা আরও বেশী বৃদ্ধি পেতে পারে। এরকম ঘটনা যেকোনো রাষ্ট্রেই জন্য খুবই অকল্যাণকর। সেই ব্যাপারে আমাদের সকলকে সজাগ থাকতে হবে। সবদিক বিবেচনায় বাংলাদেশকে যথাযথভাবে সতর্ক অবস্থানে থাকতে হবে।

ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার দ্বন্দ্বের সমাধান অবশ্যই করতে হবে। কারণ দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে এমন অচলাবস্থা তো বেশীদিন চলতে পারে না। এই ট্র্যাজেডি হয়তো নতুন কোনো মোড় নিতে পারে। এ সংকটে বাংলাদেশের উচিত হবে সরকারের পেশাদারিত্ব বৃদ্ধি করা। এ অঞ্চলে বড় ধরনের যুদ্ধ যেন না হয়, সেটাই আমাদের সকলের কাম্য। যুদ্ধ এখনও শুরু হয়নি এবং যুদ্ধটা গুজবে শেষ হলেই শুভ হয়, ভালো হয়। যদি সত্যি যুদ্ধ শুরু হয়ে যায় ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে, বাংলাদেশের উচিত হবে ওই যুদ্ধের অংশভাগী না হওয়া। শেষ কথা, যুদ্ধ কখনো কারো জন্য শান্তি বয়ে আনে না। আমাদের উচিত শান্তি ও সহনশীলতা প্রতিষ্ঠার জন্য চেষ্টা করা।

[ লেখক : কলাম লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক]

মন্তব্য করুন