রূপালী বিশ্ব

প্রকাশিত: ১৭ জুলাই, ২০২৪, ০৮:০৪ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

হাসপাতালের লিফটেই ৪২ ঘণ্টা, তারপর

ছবি: সংগৃহীত

গত শনিবার (১৩ জুলাই) সকালের দিকে তিরুঅনন্তপুরম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যান ৫৯ বছর বয়সী রবীন্দ্রন নায়ার। অর্থোপেডিক বিভাগে পিঠের ব্যথার চিকিৎসা করাতে যান তিনি। সেখানে তার কিছু মেডিকেল টেস্ট করা হয়। তারপর তিনি বাড়ি ফিরে যান। বিকেলে আবার তিনি ওই মেডিকেল কলেজে যান টেস্ট রিপোর্ট নেয়ার জন্য। কিন্তু লিফটে ওঠার পর সেটি বন্ধ হয়ে যায়। তিনি ভেতরে আটকা পড়েন।

খাদ্য ও পানীয় ছাড়া সেখানে প্রায় ৪২ ঘণ্টা আটকে ছিলেন তিনি। প্রস্রাব-পায়খানা করেন সেখানেই। অবশেষে দুইদিন পর তাকে উদ্ধার করা হয়। ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের দক্ষিণের রাজ্য কেরালায়।

 আটকা পড়ার পর বেশ কয়েকবার লিফটের অ্যালার্মের সুইচ চাপেন তিনি। তার পরও তাকে কেউ উদ্ধার করতে যাননি। এরপর তিনি লিফটের ভেতরের ইমার্জেন্সি ফোন নম্বরে ফোন দেন। কিন্তু কেউ সাড়া দেয়নি। এরপর তিনি তার স্ত্রীর সাথে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন।

এর মধ্যে তার ফোনটি হাত থেকে পড়ে ভেঙে যায়।

 ‘আমি আতঙ্কিত হয়ে পড়লাম এবং মনোযোগ আকর্ষণের জন্য লিফটের দরজায় আঘাত করতে লাগলাম। তখনই আমার ফোন মেঝেতে পড়ে গেল এবং কাজ করা বন্ধ করে দিল’, বলেন রবীন্দ্রন।

 ‘আমি সাহায্যের জন্য চিৎকার করে উঠলাম এবং আমার হাত দিয়ে টেনে দরজাগুলো ফাকা করার চেষ্টা করলাম। লিফটের ভেতরে তখন অন্ধকার। কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে শ্বাস নেয়ার মতো পর্যাপ্ত বাতাস ছিল।’

 রবীন্দ্রন বলতে থাকেন, এরপর তিনি লিফটের চারপাশে হাঁটতে শুরু করেন। বারবার অ্যালার্ম বেল টিপতে থাকেন এই আশায় যে, কারও দৃষ্টি আকর্ষণ করবে। কিন্তু কোনো লাভ হলো না।

 কয়েক ঘণ্টা পেরিয়ে যাওয়ার পর আমি বুঝতে পারছিলাম না এটা দিন নাকি রাত। কারণ ভেতরে প্রচণ্ড অন্ধকার। যখন আমি ক্লান্ত হয়ে পড়লাম। তখন আমি এক কোণে শুয়ে পড়ি। আমাকে প্রস্রাব ও মলত্যাগ করার জন্য অন্য কোনা ব্যবহার করতে হয়েছিল।

 এদিকে রবীন্দ্রন বাড়ি না ফেরায় চিন্তায় পড়ে যান তার পরিবারের সদস্যরা। তার পরিবারের পক্ষ থেকে মেডিকেল কলেজ থানায় নিখোঁজের অভিযোগ দায়ের করা হয়।

 মেডিকেল কলেজের কেউ জানতেন না যে একজন রোগী লিফটে আটকে আছেন। সোমবার সকাল ৬টার দিকে লিফট অপারেটর এসে লিফট খুলে দেখেন একজন সংজ্ঞাহীন অবস্থায় পড়ে রয়েছেন।

অপারেটর জানান, লিফটের সামনে একটি বোর্ড ছিল। সেখানে ওই লিফট ব্যবহার না করার কথা লেখা ছিল।

কিন্তু রবীন্দ্রন নায়ারের পরিবারের অভিযোগ, বিকল লিফটের সামনে কোনো সতর্কতামূলক বোর্ড লাগানো হয়নি।

সোমবার (১৫ জুলাই) সকালে লিফট অপারেটর তাকে খুঁজে পাওয়ার আগ পর্যন্ত লিফটের মধ্যেই ছিলেন তিনি।

 আটকা পড়ার দু’দিন পর লিফটের মধ্য থেকে তাকে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। রবীন্দ্রন এখন ওই হাসপাতালেই রয়েছেন। সেখানে পানিশূন্যতা ও পিঠের ব্যথার চিকিৎসা নিচ্ছেন তিনি। ঘটনাটি গণমাধ্যমের শিরোণাম হওয়ার পরই টনক পড়ে কর্তৃপক্ষের।

 রাজ্য সরকার লিফটের তিন টেকনিশিয়ানকে বরখাস্ত করে তদন্ত শুরু করেছে। এদিকে তিরুঅনন্তপুরম সরকারি মেডিকেল কলেজের কর্মকর্তারা ও রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ভুক্তভোগী রোগী রবীন্দ্রন নায়ারের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন।

মন্তব্য করুন