
প্রকাশিত: ২৭ এপ্রিল, ২০২৫, ১১:০০ এ এম
অনলাইন সংস্করণ
জুয়েল রানা নাগরপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধিঃ
টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলায় বিদ্যুৎ বিপর্যয় যেন নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে উঠেছে। প্রতিদিন ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন উপজেলার কয়েক লক্ষাধিক মানুষ। দিনের পর দিন একাধিকবার বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় বিশেষ করে দুপুর ও সন্ধ্যার সময়ের লোডশেডিং জনজীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে।
শহর থেকে গ্রাম—সব জায়গায় এক চিত্র। বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই থমকে যায় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। প্রচণ্ড গরমে হাঁসফাঁস করছে শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই। বিদ্যুৎ না থাকায় বন্ধ হয়ে যায় পানির মোটর, ফ্রিজ, ফ্যান ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি। কৃষকরা শঙ্কিত হচ্ছেন শস্যচাষ নিয়ে, কারণ সেচ ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিক্রি কমে যাচ্ছে, পণ্য নষ্ট হচ্ছে।
একজন স্থানীয় মুদি দোকানি মোঃ সুজন মিয়া বলেন, প্রতিদিন এত বার বিদ্যুৎ যায় যে ফ্রিজে রাখা দুধ, বরফ ও অন্যান্য দ্রব্য পচে যাচ্ছে। দিন দিন লোকসানে যাচ্ছি।
সবচেয়ে হতাশাজনক দিক হলো—লোডশেডিং নিয়ে গ্রাহকদের জন্য কোনো পূর্বঘোষণা, সময়সূচি বা জরুরি নোটিশ দেওয়া হচ্ছে না। কোন এলাকায় কত ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকবে না, তা কেউ জানে না। হঠাৎ হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আসছে না। কোথাও দিনে ৪ ঘণ্টা, কোথাও আবার ৬-৮ ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং হচ্ছে, যা গ্রাহকদের চরম অনিশ্চয়তায় ফেলেছে।
একজন ক্ষুব্ধ গ্রাহক বলেন, আমরা তো জানিই না কখন বিদ্যুৎ যাবে। নোটিশও দেয় না কেউ। জরুরি কাজ, পড়াশোনা, ব্যবসা—সবই বিঘ্নিত হচ্ছে।
লোডশেডিংয়ের কারণে কৃষকরাও পড়েছেন মারাত্মক সমস্যায়। সেচ পাম্প বন্ধ থাকায় মাঠে জমির পানি দিতে পারছেন না তাঁরা। এতে আমন, গ্রীষ্মকালীন সবজি এবং অন্যান্য ফসলের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। একজন কৃষক মোঃ হালিম মিয়া বলেন, আমরা যখন জমিতে সেচ দেই, ঠিক তখনই বিদ্যুৎ চলে যায়। দুই-তিন ঘণ্টা অপেক্ষা করেও আবারও বিদ্যুৎ পাচ্ছি না। সময়মতো পানি না দিতে পারলে আমাদের ফসল শুকিয়ে যাবে। এরকম চলতে থাকলে বড় ক্ষতির মুখে পড়বো।
এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে কয়েকশ শিক্ষার্থী। বিদ্যুতের ঘন ঘন বিঘ্নে তাদের পড়াশোনা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এসএসসি পরীক্ষার্থী মোঃ জিদান আহমেদ বলেন, প্রতিদিন সন্ধ্যার পর বিদ্যুৎ চলে যায়। গরমে ঘুমাতে পারি না, আবার মনোযোগ দিয়ে পড়তেও পারি না। পরীক্ষার আগে এমন হলে আমরা কীভাবে ভালো প্রস্তুতি নেবো?
শুধু শিক্ষার্থী নয়, অভিভাবকরাও দুশ্চিন্তায় পড়েছেন সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে। এক অভিভাবক আঃ রাজ্জাক বলেন, আমার সন্তান এবার এসএসসি দিচ্ছে। কিন্তু বিদ্যুতের জন্য ঠিকমতো পড়তে পারছে না। গরমে অসুস্থও হয়ে পড়ছে। প্রশাসনের উচিত শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনায় নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া।
উপজেলার সচেতন মহল বলছে, নাগরপুরের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলায় দিনের পর দিন এমন বিদ্যুৎ সমস্যা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। দ্রুত সমস্যার সমাধান না হলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে শিক্ষা, কৃষি ও স্থানীয় অর্থনীতি। স্থানীয় জনপ্রসাশনের দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
নাগরপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডিজিএম মোঃ শফিকুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে জাতীয় গ্রিড থেকে সরবরাহ ঘাটতির কারণে লোডশেডিং দেওয়া হচ্ছে। এটি কেবল নাগরপুরে নয়, সারাদেশেই পরিস্থিতি একই রকম। আমরা চেষ্টায় আছি যেন যতটা সম্ভব ভোগান্তি কম হয়। দ্রুত পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আশা করছি।
মন্তব্য করুন