প্রকাশিত: ৯ ঘন্টা আগে, ০৪:২৭ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

নাগরপুরে অসহনীয় গরম, বিপাকে দিনমজুর-শিক্ষার্থীরা

 

জুয়েল রানা নাগরপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি:

টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলায় চলমান তীব্র গরমে জনজীবন চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। গত কয়েকদিন ধরে প্রচণ্ড সূর্যতাপ ও তাপপ্রবাহে উপজেলার নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছেন। সকাল ১০টার পর থেকেই রাস্তাঘাট ফাঁকা হতে শুরু করে, বিশেষ করে দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চারপাশে নেমে আসে নিস্তব্ধতা।

উপজেলার নাগরপুর বাজার, সহবতপুর বাজারসহ আশপাশের বিভিন্ন বাজার ও মোড়ে দেখা গেছে—মানুষ গাছের ছায়া কিংবা দোকানের নিচে আশ্রয় নিচ্ছেন গরম থেকে কিছুটা রেহাই পাওয়ার আশায়। খোলা আকাশের নিচে কাজ করা রিকশাচালক ও দিনমজুররা বলছেন, এমন গরমে কাজ চালিয়ে যাওয়া খুব কষ্টকর।

স্থানীয় আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, নাগরপুরে গত কয়েকদিন ধরে তাপমাত্রা ৩৪ থেকে ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করছে। এর সঙ্গে আর্দ্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় গরম আরও বেশি অনুভূত হচ্ছে।

তীব্র গরমের প্রভাবে উপজেলার শিক্ষা কার্যক্রমও ব্যাহত হচ্ছে। বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে গেছে। শ্রেণিকক্ষে ফ্যান চালু থাকলেও তাতে স্বস্তি মিলছে না।

নাগরপুর সরকারি কলেজের এক শিক্ষার্থী বলেন, এই গরমে ক্লাসে বসে থাকা যায় না। মাথা ঘুরে, শরীর দুর্বল লাগে।

এসএসসি পরীক্ষার্থীরা বলছেন, এই অসহনীয় গরমে পরীক্ষা দিতে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। তারা জানায়, পরীক্ষার হলে অতিরিক্ত গরমে মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে।

নাগরপুর সরকারি যদুনাথ পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের এক এসএসসি পরীক্ষার্থী বলেন, রোদে এসে হলে ঢুকতেই মাথা ঘুরে যায়। অনেক সময় প্রশ্ন ভালোভাবে পড়াও কঠিন হয়ে যায়।

অভিভাবকরাও বিষয়টি নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। স্থানীয় এক অভিভাবক বলেন, এই গরমে আমাদের সন্তানরা পরীক্ষা দিতে যাচ্ছে, খুব চিন্তায় থাকি। তাপপ্রবাহে কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে, সেই দোয়াই করি।

নাগরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে হিটস্ট্রোক, পানিশূন্যতা ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিনই বহু মানুষ চিকিৎসা নিচ্ছেন। শিশু ও বৃদ্ধদের মধ্যে এসব সমস্যা বেশি দেখা যাচ্ছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. হাফিজুর রহমান বলেন, তীব্র গরমে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন শিশু, বৃদ্ধ এবং যাদের আগে থেকেই স্বাস্থ্য সমস্যা রয়েছে। আমরা সবাইকে পর্যাপ্ত পানি পান, হালকা খাবার গ্রহণ এবং রোদে বের না হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি।

নাগরপুর উপজেলার মোট ইউনিয়নের সংখ্যা ১২টি এবং এখানে বসবাস করছেন প্রায় ৩ লাখ মানুষ। কয়েকদিন ধরে চলমান এই গরমে প্রতিটি বাড়ি, প্রতিটি বাজার এবং প্রতিটি প্রতিষ্ঠান যেন স্তব্ধ হয়ে পড়েছে।

যদিও এখনো কোনো দুর্ঘটনা বা প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি, তবে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আগামী কয়েকদিনেও উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই। ফলে গরমের এই তীব্রতা আরও কিছুদিন ধরে থাকবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। 

মন্তব্য করুন