
প্রকাশিত: ৫ জুলাই, ২০২৪, ০৭:৪৪ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
গত কোরবানি ঈদে ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’তে পরিণত হয় কোটি টাকার ‘বংশমর্যাদাসম্পন্ন’ গরু বিক্রি নিয়ে। বেশ আলোচনাও তৈরি হয়। তবে এর সঙ্গে যুক্ত হয় ছাগল কাণ্ড। সেটি নিয়ে আলোচনার মধ্যেই আবার সামনে আসে এই কোটি টাকা মুল্যের উচ্চবংশীয় গরু নিয়ে।
গরুটি ছিল ব্রাহমা জাতের। ব্রাহমা উন্নত জাতের মাংসল গরু। বলা হয় এটি যুক্তরাষ্ট্রের গরু। তবে এর আদিনিবাস ভারত উপমহাদেশে। তাই আমাদের এই উপমহাদেশের অন্যান্য গরুর মতো এর কুঁজ রয়েছে।
বিশ্বজুড়ে এ জাতের গরু বেশ জনপ্রিয় হলেও বাংলাদেশে সেটি আমদানি নিষিদ্ধ। কিন্তু কেন?
১৮৮৫ সালের দিকে মার্কিনরা ভারত উপমহাদেশের এই গরু আমদানি করে। এরপর অন্যান্য ভালো জাতের গরুর সঙ্গে সংকরায়ণ করে। এতে ব্রাহমার এই জাত উদ্ভাবন করে তারা। অস্ট্রেলিয়ায় এই জাতের গরু প্রথম রপ্তানি করা হয় ১৯৩৩ সালে। পরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তা ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিলসহ ৫০টির বেশি দেশে এ জাতের গরু লালনপালন করা হয়।
ব্রাহমা আকারে অনেক বড় জাতের গরু। ওজন ৮০০ থেকে ১ হাজার ২০০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে।
জন্মের সময় একটি বাছুরের ওজনই ১২০ থেকে ২০০ কেজি হয়ে থাকে। এগুলো উচ্চতায় ১২৮ থেকে ১৪৫ সেন্টিমিটার।
সচরাচর দেখা যায় এ গরুর তিনটি রঙ। এগুলো সোনালি বা ব্রোঞ্জ ও গাঢ় লাল রঙের হতে পারে। কিছু আবার সাদা থেকে হালকা বা গাঢ় ধূসর রঙের এবং কিছু গরু রুপালি রঙ নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। ধীরে ধীরে তা গাঢ় কালো রঙে পরিণত হয়।
এত জনপ্রিয় কেন ব্রাহমা গরু?
আচরণে শান্ত প্রকৃতির ব্রাহমা জাতের গরু । এগুলো লালনপালনও অনেকটাই সহজ। এ জাতের গরু সাধারণ খাবার খেয়ে বেড়ে ওঠে। এ গরুর গায়ের রং ও সৌন্দর্য সহজে দৃষ্টি আকর্ষণ করে। আকার বৃদ্ধির সঙ্গে মাংসের ওজনও বৃদ্ধি পায়। এ গরুর মাংসের গুণও তুলনামূলক ভালো। ব্রাহমা গরু প্রতিবছর একটি করে বাচ্চা দেয়। এ গরু উষ্ণ ও আর্দ্র অঞ্চলে সহজে বেড়ে ওঠে, যার জন্য বাংলাদেশের আবহাওয়া এ গরুর জন্য খুবই উপযোগী। এর ওজন দ্রুত বৃদ্ধি পায়। রোগ প্রতিরোধক্ষমতা অনেক বেশি হওয়ায় সহজে কোনো রোগে সহজে আক্রান্ত হয় না।
৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রায় এ গরুর তেমন কোনো অসুবিধা হয় না। সাধারণত ১৫ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত এ জাতের গরু বাঁচে। এর মাথার শিংয়ের পাশের রং, গলার নিচে ঝুলে থাকা চামড়ার রং, কুঁজের রং ও আকার চোখে পড়ার মতো। এসব বৈশিষ্ট্যও এ জাতের গরুর জনপ্রিয়তার একটি কারণ।
ব্রাহমার দৈহিক আকৃতি বড় হলেও এটি মাংসল হওয়ায় এর দুধ উৎপাদনের ক্ষমতা কম। যা একে বর্তমানে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে এসেছে।
বিজ্ঞানীরা দুধ উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করছেন। এ গরুর বাচ্চার আকার বড় হওয়ায় দুধের চাহিদা বেশি হয়ে থাকে। ব্রাহমা জাতের গরু তার আকৃতি অনুযায়ী বেশি দুধ দেয় না। যতটা দুধ দেয়, তাতে শুধু বাছুরের চাহিদাই মেটে। খামারিরা বেশি মুনাফার আশায় যদি ব্যাপক হারে ব্রাহমা উৎপাদন করেন, তাহলে দেশে গরুর দুধের উৎপাদন কমে যেতে পারে। মূলত বাংলাদেশের দুগ্ধ উৎপাদন খাতকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্যই বেসরকারি পর্যায়ে এ জাতের গরু আমদানি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
এ জাতের গরু বাংলাদেশে পালন ও উৎপাদন নিষিদ্ধ না হলেও ২০১৬ সালে এক নীতিমালার মাধ্যমে এ জাতকে আমদানি নিষিদ্ধের তালিকায় রাখা হয়েছে। ব্রাহমা গরু লালনপালনের ব্যাপারে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের আইনে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই, তবে নীতিমালা অনুসরণ করে লালনপালন করতে হবে।
জাতটি এ অঞ্চলের আবহাওয়া উপযোগী ও রোগপ্রতিরোধী। তাই সুনির্দিষ্ট নীতিমালা গ্রহণ সাপেক্ষে এ জাতের গরু লালনপালন করে দেশের মাংসের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি মাংস রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।
মন্তব্য করুন