প্রকাশিত: ৮ ঘন্টা আগে, ১১:৩২ এ এম

অনলাইন সংস্করণ

যুক্তরাষ্ট্রকে আজ শুল্কচুক্তির খসড়া অবস্থানপত্র দেবে বাংলাদেশ

 

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত পারস্পরিক শুল্ক চুক্তির বিষয়ে নিজেদের খসড়া অবস্থানপত্র মঙ্গলবার (২২ জুলাই) ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি কার্যালয়ে (ইউএসটিআর) জমা দেবে বাংলাদেশ। 

তবে এই বিষয়ে আলোচনার জন্য তৃতীয় দফা বৈঠকের অনুরোধ জানালেও এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে কোনো তারিখ জানানো হয়নি বলে জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান সোমবার (২১ জুলাই) সন্ধ্যায় গণমাধ্যমকে বলেন, 'আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে মিটিংয়ের সময় দেওয়ার জন্য ই-মেইল করেছি। কিন্তু এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া আসেনি।'

চুক্তি সংক্রান্ত খসড়া অবস্থানপত্র প্রসঙ্গে তিনি জানান, এতে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া বিভিন্ন অ-বাণিজ্যিক শর্ত—বিশেষ করে পরিবেশ সংরক্ষণ ও শ্রম অধিকারের মতো বিষয়—বাস্তবায়নের জন্য ৫ থেকে ১০ বছর সময় চাওয়া হবে। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে কারিগরি সহায়তা চাওয়া হবে, যাতে এসব শর্ত পূরণে বাংলাদেশ সক্ষমতা অর্জন করতে পারে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, খসড়া চূড়ান্ত করতে গতকাল বিকেলে বাণিজ্য উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেছেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান। খসড়াটি আজ সকালে চূড়ান্ত করে ই-মেইলের মাধ্যমে ইউএসটিআরের কাছে পাঠানো হবে।

চূড়ান্ত আলোচনায় উভয় পক্ষ সমঝোতায় পৌঁছাতে পারলে একটি আনুষ্ঠানিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এতে বাংলাদেশের ওপর ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত যে শুল্ক আরোপিত রয়েছে, তা উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পাবে বলে আশা করছেন কর্মকর্তারা।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইতোমধ্যেই ঘোষণা দিয়েছেন যে, আগামী ১ আগস্ট থেকে পারস্পরিক শুল্কহার কার্যকর হবে।

বাংলাদেশের খসড়া অবস্থানপত্র তৈরিতে গত ২০ জুলাই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে উপস্থিত একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, যুক্তরাষ্ট্রকে শুল্ক ছাড় দেওয়ার পাশাপাশি দেশটি থেকে সরকারি পর্যায়ে (জিটুজি) আমদানি বাড়ানোর বিভিন্ন প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, খসড়া চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত কিছু অ-বাণিজ্যিক শর্ত বাংলাদেশ সরাসরি প্রত্যাখ্যান না করে বরং সেগুলোর বাস্তবায়নে সময় চেয়ে একধরনের কৌশলী অবস্থান নিচ্ছে। কোনো কোনো শর্তের ক্ষেত্রে ৫ বছর, আবার কোনো কোনো শর্তে ১০ বছর সময় চাওয়া হয়েছে।

ইন্দোনেশিয়া লবিস্ট প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দিয়ে তাদের ওপর আরোপিত শুল্কহার ৩২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৯ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা বলেন, 'বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে এমন কিছু শর্ত রয়েছে, যেগুলোর বিষয়ে নন-ডিসক্লোজার চুক্তি সই হয়েছে। তাই ইন্দোনেশিয়ার মতো লবিস্ট নিয়োগ দিয়ে দ্রুত সুবিধা আদায় করা সম্ভব নয়।'

তিনি আরও ব্যাখ্যা করেন, 'ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় চীনের বাণিজ্য কম হওয়ায় তারা অপেক্ষাকৃত সহজ শর্তে আলোচনা করতে পেরেছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র অনেক কঠিন শর্ত দিয়েছে, যেগুলোর গোপনীয়তা রক্ষা করা বাধ্যতামূলক।'

চুক্তিটি কার্যকর হলে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হওয়া বাংলাদেশের পণ্যের ওপর চাপ কমবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এখন অপেক্ষা—যুক্তরাষ্ট্র কখন তৃতীয় দফা আলোচনার সময় নির্ধারণ করে।

মন্তব্য করুন