
প্রকাশিত: ২০ মে, ২০২৪, ০৮:৩২ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
মাছ চাষে বিপ্লব ঘটিয়েছে ময়মনসিংহের ত্রিশালের মৎস্য চাষীরা। দেশের শতকরা ২২ ভাগ মাছ উৎপাদন হয় ময়মনসিংহ জেলায়। আর এর সিংহ ভাগই উৎপাদন হয় ত্রিশালে। উপজেলায় মাছের মোট উপপাদন ৮৫,১২২ মেঃ টন,উপজেলায় মাছের চাহিদা ৮,২২০ মেঃ টন এবং উপজেলায় মাছ উদ্বৃত্ত ৭৬,৯০২ মেঃ টন। ত্রিশাল উপজেলার আয়তন ৩৩৮.৭৩ বর্গ কিলোমিটার এবং মোট জনসংখ্যা ৩৩৬৭৯৭ জন। ১টি পৌর সভা ও ১২টি ইউনিয়ন নিয়ে ত্রিশাল উপজেলা গঠিত। উপজেলায় সরকারি পুকুরের সংখ্যা ৫টি যার আয়তন ১৩৪ হেক্টর,বেসরকারি পুকুরের সংখ্যা ২৪৪৯৮টি যার আয়তন ৩১২৫ হেক্টর। সরকারি হ্যাচারি ১টি এবং বেসরকারি মৎস্য হ্যাচারির সংখ্যা ৩৮টি।
এ উপজেলায় সরকারি হিসেব মতে খালের সংখ্যা ২০টি যার আয়তন ৪২ হেক্টর, বিলের সংখ্যা ৩৭টি যার আয়তন ৯ শত হেক্টর এবং নদীর সংখ্যা ৭টি যার আয়তন ১২৩২ হেক্টর। মৎস্য নার্সারির সংখ্যা ১১০টি,মৎস্য খাদ্য কারখানার সংখ্যা ১টি, মৎস্য খাদ্য বিক্রয়কারি প্রতিষ্ঠান খুচরা ৬৪টি-পাইকারি৬টি,মৎস্য খাদ্য আমদানিকারকের সংখ্যা ১জন,ক্রাশিং মিলের সংখ্যা ২৮টি, মৎস্যজীবির সংখ্যা ৩৩০৯জন, মৎস্য আড়তের সংখ্যা ১৯টি, বরফ কলের সংখ্যা ৮টি।
উপজেলা মৎস্য অফিসের অধীনে একটি মৎস্য প্রকল্প চলমান। প্রকল্প হলো- ন্যাশনাল টেকনোলজি প্রজেক্ট (এন.এ.টিপি-২)। প্রকল্পতে একজন সম্প্রসারন কর্মকর্তা, একজন ক্ষেত্র সহকারি এবং ১২টি ইউনিয়নে প্রকল্পের একজন করে ১২জন স্থানীয় মৎস্য সম্প্রসারন প্রতিনিধি রয়েছে। উপজেলায় ধান, সবজি চষের পাশাপাশি পাল্লা চলছে মাছ চাষ। মাছ চাষীদের অভিযোগ মধ্য সত্তাকারিদের কারনে তারা দামে কিছুটা কম পাচ্ছেন। তাছাড়া বিদেশে সরাসরি মাছ রপ্তানী প্রক্রিয়া না থাকায় তারা আর্থিক ভাবে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তবে বিদেশে মাছ
রপ্তানীর জন্য ভার্গো ও সেভেন ওসান দুটি বেসকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
অপর দিকে এন.এ.টিপি-২ প্রকল্পের আওতায় পৌর শহরের কোর্ট বিল্ডিং এলাকায় ১০ শতাংশ জমির উপর স্থাপিত হয়েছে ত্রিশাল মৎস্য আহরণোত্তর সেবা কেন্দ্র । সেবা কেন্দ্রটি চালু হওয়ার ১২শত চাষী এর সুফল ভোগ করছে। মৎস্য মৎস্য পরিবহনের জন্য
সেবা কেন্দ্রের রয়েছে একটি নিজস্ব পরিবহন। যা দিয়ে ১২শত চাষী নামমাত্র ভাড়ায় তাদের মৎস্য পরিবহন করে থাকে। যদি কোন চাষী কোন কারনে তাদের মাছ বিক্রি করতে পারলে সেবা কেন্দ্রে নামমাত্র ফি দিয়ে তাদের মাছ সেখানে কয়েকদিন রেখে
দিতে পারেন। তাছড়াও এই সেবা কেন্দ্রে একটি বরফ কল রয়েছে। চাষীরা এখান থেকে বরফ ক্রয় করে কাঙ্গিত সেবাও পাচ্ছেন এখান থেকে।
পৌর শহরের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে দেশীয় প্রজাতির মাছ ও পাঙ্গাস মাছের জন্য দুটি পৃথক মৎস্য আড়তে প্রতিদিন টনকেটন মাছ বিক্রি হচ্ছে। প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে চলে বেলা ১১টা পর্যন্ত। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাইকারদের মাধ্যমে চলে যাচ্ছে এই মাছগুলো।
দেশীয় প্রজাতির মাছের দয়াল নবী মৎস্য আড়তের প্রো প্রাইটর আবুল মুনসুর জানান, এ মৎস্য আড়ত থেকে প্রতিদিন ১৫/২০ টন মাছ বিক্রি হচ্ছে যার আনুমানিক মূল্য ১৫/২০ লক্ষ টাকা। অপর দিকে পাঙ্গাস মৎস্য আড়তের প্রগতি ফিস কমিশন এজেন্টের প্রো প্রাইটর তাজুল ইসলাম গং জানান,এ আড়ত থেকে ৮০ থেকে ৯০ টন মাছ বিক্রি হচ্ছে যার আনুমানিক মূল্য ৬৫/৭৩ লক্ষ টাকা।
উপজেলার সদর ইউনিয়নের ছলিমপুর গ্রামের মাহাবুব মৎস্য হ্যাচারি এন্ড ফিসারিজের প্রো প্রাইটর খাইরুল বাসার মাহাবুব জানান, আমার হ্যাচারীতে শিং,পাবদা,গুলশা,টেংরা,মাগুর ও দেশীয় প্রজাতির সকল প্রকার রেনু ও পোনা বিক্রয় করা হয়। রেনু ও পোনার গুনগত মান ভাল হওয়ায় ত্রিশালসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে চাষীরা আমার হ্যাচারী থেকে রেনু ও পেনা ক্রয় করে নিয়ে চাষ করে লাভবান হচ্ছেন।
উপজেলার হরিরামপুর ইউনিয়নের মৎস্য চাষী আশিক আহমেদ জানান, মৎস্য খাদ্যের দাম দিনদিন বৃদ্ধির ফলে মাছ চাষে বর্তমানে কৃষকের লাভের পরিমান কম হচ্ছে। সরকার যদি মৎস্য খাদ্যের দাম নির্ধারন করে দেন তবে মৎস্য চষীরা লাভবান হবে বলে আমি মনে করি। তাছাড়া সরকার যদি মৎস্য ঋনের পরিমান বৃদ্ধি করেন তবে প্রান্তিক চাষিদের মৎস্য চাষীরা মাছ চাষে আরো উৎসাহী হবেন।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা তোফায়েল আহমেদ জানান, এন.এ টিপি প্রজেক্টের আওতায় ত্রিশালে একটি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র নির্মাণা করা হয়েছে। এটির মাধ্যমে মৎস্য চাষীরা অনলাইনে সরাসরি তাদের উৎপাদিত মাছ বিক্রি করতে পারছেন এবং তারা লাভবান হচ্ছেন। তিনি বলেন মাছ চাষে ত্রিশাল একটি মডেল উপজেলা। উপজেলা মৎস্য অফিসসের সঠিক তদারকির কারনে ত্রিশালে মাছ চাষ দিনদি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ অফিস থেকে চাষীদের নিয়মিত পরামর্শ, প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি।
তিনি আরো বলেন, ত্রিশাল থেকে মাছ সরাসরি এবং পাইকার মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যাচ্ছে। মাছ চাষে ত্রিশাল একটি মডেল উপজেলা। তাই এন.এ.টিপি-২ প্রকল্পের আওতায় এখানে একটি মৎস্য আহরণোত্তর সেবা কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। তাছাড়া এই প্রকল্পের আর্থিক সহযোগিতায় একটি পিকআপ ভ্যান ও একটি বরফ কল র্মিান করে দেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে ১২শত মৎস্য চাষী সরাসরি এই সেবা কেন্দ্রের সুফল পাচ্ছেন।
মন্তব্য করুন