প্রকাশিত: ৮ ঘন্টা আগে, ০৮:২৯ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

বিপিএমসিএ’র নির্বাচন :তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বীতায় দুই প্যানেল

 

 

নানা বিতর্কের মধ্য দিয়ে দেশে প্রথমবার সরাসরি ভোটের নির্বাবচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বেসরকারি মেডিকেল কলেজ মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ এসোসিয়েশনের (বিপিএমসিএ) নির্বাচন। আজ বুধবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সদস্যরা ভোট দিতে পারবেন।

নিয়ম অনুযায়ী প্রতি দুই বছর অন্তর নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও সংগঠনটি প্রতিষ্ঠার ১৫ বছরে সরাসরি কোন নির্বাচন হয়নি। এতোদিন সিলেকশনের মাধ্যমেই কতিপয় পদবীধারীরা পদে আসীন হয়েছেন। ফলে সংগঠনে এক ধরণের কর্তৃত্ববাদের সৃষ্টি হয়। সেই কর্তৃত্ববাদের অবসানের লক্ষ্যেই দাবি উঠে সরাসরি ভোটের।

৫ আগস্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলে আত্মগোপনে চলে যান সংগঠনের বর্তমান কমিটির মহাসচিব আনোয়ার হোসেন খান। তারপর থেকে মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করছেন অধ্যাপক ডা. মো. মোয়াজ্জেম হোসেন। ফলে সংগঠনে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনে ভোটের দাবি আরও জোরাল হয়। ফলে বর্তমান কমিটি বাধ্য হয় নতুন নির্বাচনের পথে যেতে। এ সময় তারা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য সংগঠন অনুবিভাগে আবেদন করলে ২ নভেম্বর ২০২৪ হতে ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত তিন মাসের সময় বৃদ্ধি করা হয়। কিন্তু ওই সময়েও বর্তমান কমিটি নির্বাচনে দিতে গড়িমসি করে। তখন সদস্যদের জোরাল দাবির মুখে কমিটি আবারো সময় বৃদ্ধির আবেদন করলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আরও ৬ মাস সময় বৃদ্ধি করে। বাণিজ্য সংগঠন আইন ২০২২ এর ১৪ ধারা অনুযায়ী ৬ মাস সময় মঞ্জুরের বিধান থাকলেও দুই দফায়  মোট ৯ মাস সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে, যা আইনের পরিপন্থি।

নির্বাচন দিতে বাধ্য হলেও বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, বিতর্কিত নির্বাচনী বোর্ড গঠন এবং নির্বাচনী তফসিলে ইচ্ছাকৃতভাবেই অসংগতি সৃষ্টি করছে। নির্বাচন বাতিল করে সিলেকশনের মাধ্যমে বর্তমান সভাপতির পছন্দের কাউকে শীর্ষপদে বসাতেও বিভিন্ন মহলে জোর তদবির চালিয়েছেন। তবে সদস্যদের জোর প্রতিবাদে শেষ পর্যন্ত নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়েছেন তারা।

সদস্যদের জোরাল দাবির প্রেক্ষিতেই অবশেষে নানা বাধা পেরিয়ে অবশেষে আজ বুধবার ভোটাধিকারের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করতে যাচ্ছেনর বিপিএমসিএর সাধারণ ভোটাররা।

বিপিএমসিএ’র কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচনে এবার দুটি প্যানেল প্রতিদ্ব›দ্বীতা করছেন। একটি হলো মহিউদ্দিন-মুকিত পরিষদ। আর অন্যটি হলো আফরোজা-মোয়াজ্জেম পরিষদ। নির্বাচনে ৫৫ টি মেডিকেল কলেজের ১১০ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে ২১ সদস্যবিশিষ্ট নির্বাহী কমিটি নির্বাচন করবেন।

প্রতিদ্ব›দ্বী দ্ইু প্যানেলের মধ্যে আফরোজা-মোয়াজ্জেম প্যানেলে বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটির ১৩ জন প্রতিনিধি রয়েছেন। তাছাড়া এই প্যানেলে প্রতিদ্বন্দিতাকারীরা অতীতের অন্যান্য কার্যনির্বাহী কমিটিতেও বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।

পক্ষান্তরে মহিউদ্দিন-মুকিত প্যানেলটি যাদের নিয়ে গঠিত হয়েছে, তারা অতীতে কখনও কোন কার্যনির্বাহী কমিটিতে দায়িত্ব পালন করেন নি। এই প্যানেলে রয়েছে নতুন কিছু করার তথা সংগঠনকে বদলে দেয়ার প্রত্যয়ী এক ঝাঁক নতুন প্রার্থী। তাই বলা যায়, এই নির্বাচন হতে যাচ্ছে বর্তমানে ক্ষমতাসীন ও অতীতে ক্ষমতায় আসীনদের নির্বাচান। 

নির্বাচনের প্রচারকালে আফরোজা-মোয়াজ্জেম প্যানেলের নেতৃত্বের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ চাউর হয়েছে। এ সব অভিযোগের মধ্যে রয়েছে, পতিত আওয়ামী স্বৈরচারি সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী ও এমপিদের নাম করে প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষকে বিভিন্ন প্রলোভন ও ভয়তীতি দেখিয়ে শতশত কোটি টাকা আত্মসাৎ, বিপিএমসিএ’র সংঘ বিধি-৫ অনুযায়ি বাৎসরিক চাঁদা ২৪ হাজার টাকা হলেও প্রতিটি মেডিকেল থেকে ২ লাখ বা তার বেশি টাকা চাঁদা আদায় প্রভৃতি।

জানা গেছে, ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ গুলোতে সর্বমোট ৪৬৭ টি সিট ফাঁকা রয়েছে। এই ফাঁকা আসনে ভর্তির জন্য পোর্টাল উন্মুক্তকরণের কথা বলে বেসরকারি মেডিকেল কলেজ থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ উঠলে, চাঁদাবাজীর অংশীদারের দুর্নামের ভাগীদার হবার শংকা থেকেই পোর্টাল উন্মুক্ত করেনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

বিপিএমসিএ’র কয়েকজন সদস্য জানান, অতীতে মুষ্টিমেয় সুবিধাভোগীরা সংগঠনের দায়িত্বে থেকে সংগঠনের সাধারণ সদস্যদের জন্য বলতে গেলে কিছুই করেনি। উপরন্তু তারা বিভিন্ন সময়ে চাপ সৃষ্টি করে সদস্যদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করেছে মন্ত্রীসহ অন্যান্যদের ঘুষ দেবার নাম করে। এই ঘুষ বাণিজ্যের ফলে তারা ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হয়েছে অথচ সাধারণ সদস্যরা এখনো ভুগছে বিভিন্ন সমস্যায়। সরকার বাধ্য করেছে বেসরকারি মেডিকেল কলেজকে ভর্তির ফিস কিস্তিতে নিতে। অথচ বর্তমানে ক্ষমতায় থাকা নেতৃবৃন্দ তার কোন প্রতিকার করতে ব্যর্থ হয়েছেন।

সিলেট বিভাগের এক কলেজ মালিক জানান, এসোসিয়েশনের নেত্রীবৃন্দ চাঁদাবাজি করে মন্ত্রীসহ অন্যান্যদের ঘুষ প্রদানের অভিযোগ বেশ পুরানো। বেসরকারি মেডিকেল কলেজের অনুমোদন কিংবা সিট বৃদ্ধির প্রলোভন দেখিয়ে তারা সংশ্লিষ্ট মেডিকেল কলেজ থেকে কোটি কোটি টাকা আহরন করে কিছু পরিমানে ক্ষমতাশীলদের দিয়ে বাদবাকী টাকা আত্মসাৎ করেছেন। ঘুষের সুবিধা নিজেরা গ্রহণ করেছেন।

বিপিএমসিএ’র সদস্যরা মনে করছেন, চব্বিশের বিপ্লবোত্তর বাংলাদেশে পুরানো ক্ষমতাশীলদের কোন জায়গা নেই। নতুন বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেবে নতুনেরা। একই পুনরাবৃত্তি ঘটবে আজ অনুষ্ঠিত বিপিএমসিএ’র নির্বাচনেও।

মন্তব্য করুন