
প্রকাশিত: ১৬ জুলাই, ২০২৪, ০৮:৩২ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
কোটাবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে বগুড়ায় সড়ক অবরোধ শেষে কলেজ ক্যাম্পাসে ফেরার পথে শিক্ষার্থীদের ওপর ককটেল হামলায় চারজন আহত হয়েছে। ঘটনার পর সরকারি আজিজুল হক কলেজ ক্যাম্পাসে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। তাৎক্ষনিক সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা ছুটে গিয়ে আহত শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করে হাসাপাতালে পৌঁছে দেয়। তবে আহত শিক্ষার্থীরা ককটেল হামলার জন্য স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগকে দায়ী করছে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আতঙ্কে ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে গেছে।
মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে সরকারি আজিজুল হক কলেজের মেইন গেটের আমচত্বরে দুটি ককটেল বিস্ফোরণ করে দুর্বৃত্তরা। আহতরা কলেজের ফিন্যান্স বিভাগের তৃতীয় বর্ষের তাফসির, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের সুমন, অর্থনীতি বিভাগের ৩য় বর্ষের মামুন এবং মিলন। তারা চারজন বর্তমানে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
শিক্ষার্থীরা জানায়, কলেজ ক্যাম্পাসের জামিলনগর গেটে কোটা সংস্কারে বিক্ষোভ শুরু করে শিক্ষার্থীরা। এরপর বগুড়া শহরের তিনমাথা থেকে সাতমাথার স্টেশন সড়কে প্রায় ২০ মিনিট অবরোধ কর্মসূচি চলে। সেখান থেকে সরে কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীরা কলেজ ক্যাম্পাসে আমচত্বরে
অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করে। এসময় হঠাৎ পরপর দুটি ককটেল বিস্ফোরণ হলে কোটাবিরোধীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এক মিনিটেই ক্যাম্পাস চত্বরে অবস্থান নেয় ছাত্রলীগ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, অবরোধের সময় গুরুত্বপূর্ণ সড়কের দুই পাশে বিপুল সংখ্যক যানবাহন আটকা পড়ে। পুলিশ প্রশাসনের অনুরোধে কোটাবিরোধীরা ক্যাম্পাসের দিকে গেলে প্রশাসন ভবনের কিছুটা সামনে হঠাৎ বিকট শব্দে ককটেল বিস্ফোরণ হয়। এসময় ক্যাম্পাস চত্বরে থাকা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ছুটে গিয়ে আহত শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। ককটেল বিস্ফোরণের পর ক্যাম্পাসে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ছোটাছুটি করে। খবর পেয়ে পুলিশের একাধিক টিম ক্যাম্পাসে গিয়ে অবস্থান নিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা চলে গেলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এসে ক্যাম্পাস নিয়ন্ত্রণে নেয়।
কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ককটেল হামলার ঘটনায় স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জড়িত। অন্যদিকে ছাত্রলীগের দাবি, আন্দোলনকারীরাই ককটেল নিক্ষেপ করেছে। কারা হামলা চালিয়েছে সে ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ। ককটেল হামলায় ছাত্রলীগ জড়িত থাকলে তারা আহতদের উদ্ধারে ছুটে গেল কেন? এমন প্রশ্ন অনেক শিক্ষার্থীর।
আহতদের মধ্যে তাফসির জানায়, কলেজের সামনে অবরোধ কর্মসূচি পালন শেষে ক্যাম্পাসে ফিরছিলাম। হঠাৎ ককটেল বিস্ফোরণে আমিসহ কয়েকজন আহত হয়েছি। কারা হামলা চালিয়েছে তা স্পষ্ট করে বলতে পারেনি ওই শিক্ষার্থী।
বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সজীব সাহা বলেন, আমরা শহরের সাতমাথায় অবস্থান করছিলাম। কলেজের সামনে সড়ক অবরোধের খবর পেয়ে ক্যাম্পাসে গেলে আন্দোলনকারীরা আমাদের লক্ষ্য করে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়।
সরকারি আজিজুল হক কলেজ ক্যাম্পাসে দায়িত্বে থাকা পুলিশ পরিদর্শক আশিক ইকবাল বলেন, যেকোনো ধরণের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ককটেল বিস্ফোরণে আহত চারজন শিক্ষার্থী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে
জানিয়েছেন ছিলিমপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মিলাদুন্নবী।
বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর খোন্দকার কামাল হাসান জানান, প্রশাসন ভবনের সামনে সিটে বসে থাকা ছাত্রদের ওপর কে-বা কারা ককটেল হামলা চালিয়েছে। এতে চারজন ছাত্র আহত হয়েছে। বিষয়টি প্রশাসনকে অবহিত করা হলে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা তথ্য সংগ্রহ করছে।
এদিকে মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার পর বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কারের দাবিতে বিক্ষোভ করে। পরে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের একপাশ অবরোধ করে রাখে। সড়কে যানজটের সৃষ্টি হলে মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ সেখানে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বললে তারা সরে যায়।
মন্তব্য করুন