
প্রকাশিত: ৭ মে, ২০২৪, ১০:২০ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
জেলার প্রতিটি উপজেলায় বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। তীব্র গরম উপেক্ষা করে মাঠে নতুন ধান কাটায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। ফলন ভালো হলেও বর্তমান বাজারের ধানের ন্যায্য দাম পাওয়া নিয়ে শংকায় আছেন কৃষকরা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছেন, চলতি মৌসুমে ৫৫ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ হয়েছে। যেখান থেকে ২ লাখ ২৭ হাজার ২৬৩ হেক্টর জমিতে বোরো ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বোরো মৌসুমে হাইব্রিড, উফশী ও স্থানীয় তিন জাতের ফলনের আবাদ করেছেন কৃষকরা। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় ও নিবিড় পরিচর্চায় এ বছর ধানের ফলন খুব ভালো হয়েছে। ফলে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে প্রত্যাশা করছেন দপ্তরটি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তীব্র তাপদাহের মাঠে ধান কাটছে কৃষকরা। কিছুক্ষণ পর পরেই পানি পান করছেন। কেউ কেউ মাঠ থেকে উঠে গাছের নিচে বসে বাতাস নিচ্ছেন।
কৃষকরা জানিয়েছেন, 'আগামী দুই এক সপ্তাহের মধ্যে পুরোদমে বোরো ধান কাটা শুরু হবে। বাকি দিনগুলোতে শিলাবৃষ্টি ও কাল বৈশাখীর ছোবল যদি কাটিয়ে উঠতে পারে তাহলে তাদের সোনার ফসল ঘরে তুলতে পারবেন তারা'।
পশ্চিম চাকমার কুল ৯ নং ওয়ার্ডে কৃষক হাফেজ আহমেদ বলেন, '৬০ শতক জমিতে হাইব্রিড জাতের ধান রোপন করেছি। আলহামদুলিল্লাহ ফলনও ভালো হয়েছে।
কিন্তু তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, এবারের বোরো আবাদে সার, কীটনাশক ও সেচসহ সকল কৃষি উপকরণের মুল্য বেড়ে যাওয়ায় ধানের উৎপাদন খরচ বেশি হয়েছে। আর সরকার প্রতি মন বোরো ধানের দাম নির্ধারন করেছে ১ হাজার ২৪০ টাকা। বর্তমান বাজারে আধা শুকনো প্রতি মন চিকন ধান বিক্রি করা হচ্ছে ৮শ থেকে ৯শ টাকা দরে। এই দামে কৃষকের পোষাচ্ছে না। এ ছাড়া কৃষক সরকার নির্ধারিত দাম কোন দিনই পায় না। তাই তিনি প্রতি মন বোরো ধানের দাম ১ হাজার ৬শ টাকা করার দাবি জানান'।
সদর উপজেলা খরুলিয়া এলাকার রশিদ আহমেদ বলেন, 'দুই কানি জমিতে ৭৫ জাতের বোরোধান লাগিয়েছি। আজ পর্যন্ত কোন সমস্যা হয়নি। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ধান কাটা শুরু করবো।
কিন্তু খরচ নিয়ে অন্য কৃষকের মতো তিনিও পড়েছেন বেকায়দা। বলেন, ৪০ শতক জায়গা ৬ হাজার টাকা দিয়ে অগ্রিম নিয়েছি। পানির সেচ দিতে ৩ হাজার, শ্রমিক খরচ ৩ হাজার ছাড়াও মেশিন ভাড়া, কীটনাশক, ইউরিয়াসহ যাবতীয় খরচ বাবদ ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। চলতি মৌসুমে তিনি ৫ একর জমিতে ধানসহ বিভিন্ন প্রজাতির সবজি আবাদ করেছেন। খরচ সামলাতে না পেরে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তিনি। এভাবে জেলার অনেক কৃষক সোনালী ধানে হাসলেও খরচ ও ধামের দাম নিয়ে মোটেও সন্তুষ্ট নয় তারা।
এদিকে প্রতি বছর কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার মেশিনে জমির ধান কর্তন করায় অনেক কৃষকদের মাঝে কিছুটা স্বস্তি ফিরে আসছে। হারভেষ্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটতে পেরে তারা কিছুটা লাভবান বলে অনেক কৃষক জানিয়েছেন। তবে মেশিনের অপার্যপ্ততার কারনে তাদের ফসল দ্রুত কাটতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।
জানা যায়, জেলায় ৫৯ টি কম্বাইন হারভেস্টারের পাশাপাশি এলাকা ভেদে রিপার, ৯টি, রাইস ট্রান্সপ্লান্টার ৫৮ টি, পাওয়ার স্পেয়ার ১ টি, পাওয়ার থ্রেসার ১০৮ টি, বেড প্লান্টার ৭টি সিডার ৩২ টিসহ মোট ২৭৬ টি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী আশিষ কুমার দে জানান, 'জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বোরোধান কাটা শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে ৪০ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আবাদও ভালো হয়েছে। আশা করা হচ্ছে অতীতের এবারও বোরোধানের বাম্পার ফলন হবে'।
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: জাহিদ হাসান বলেন, 'আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় কৃষি অফিসের নিবিড় পরিচর্যায় এ বছর বোরো ফলন ভাল হয়েছে। বোরো আবাদের লক্ষামাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
উল্লেখ্য, চলতি বোরো মৌসুমে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে ১৭ লাখ টন ধান ও চাল কিনবে সরকার। এরমধ্যে ৫ লাখ টন ধান, ১১ লাখ টন সিদ্ধ চাল, এক লাখ টন আতপ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
প্রতি কেজি বোরো ধানের সংগ্রহ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ধান ৩২ টাকা, সিদ্ধ চাল ৪৫ টাকা এবং আতপ চাল ৪৪ টাকা
মন্তব্য করুন