ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৫ মার্চ, ২০২৪, ০৯:৪৬ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

ঠাকুরগাঁওয়ে ১০ বছরে আম বাগান বেড়েছে দ্বিগুন

ছবি সংগৃহীত

ধান গমসহ অন্যান্য ফসলে বারবার লোকসান গুনায় এবং ফল বিক্রি করে বেশি লাভবান হওয়ায় ঠাকুরগাওয়ে আমের বাগান করার নিরব বিপ্লব শুরু হয়েছে ।

বিশেষ করে রুপালী জাতের আম্রপালি আমের চাহিদা ও দাম ভাল থাকায় কৃষকেরা ওই জাতের বাগান স্থাপনে ঝুকে পড়েছেন।

বিশেষ করে জেলার পীরগঞ্জ উপজেলায় গত ১০ বছরে এখানে প্রায় দ্বিগুন পরিমাণ আমের বাগান স্থাপন করা হয়েছে। অনেকে লিচু বাগান কেটে ফেলেও আমের বাগান স্থাপন করছেন।

ঠাকুরগাঁও জেলার মাটি তুলনামুলক উচুঁ। এ মাটিতে ধান গম পাট আলুসহ বিভিন্ন ফসলের আবাদ করে আসছেন এ জেলার প্রান্তিক চাষিরা। কিন্তু ওইসব ফসল উৎপাদন করে নায্যমূল্য না পেয়ে চাষীরা প্রতি বছর লোকসান গুনে আসছিলেন।

এ কারণে চাষীরা খাদ্যশষ্য উৎপাদন থেকে সরে আসতে থাকে। সেক্ষেত্রে চাষীরা জমিতে আম বাগান স্থাপন শুরু করে। ফল বিক্রি করে মোটা অংকের টাকা লাভবান হওয়ায় চাষীরা দিনদিন আমের বাগান স্থাপনে ঝুঁকে পড়ছেন।আমের বাগান হতে বিষমুক্ত আম ও সাথী ফসল হিসেবে বিভিন্ন ফসল পাওয়ায় কৃষকেরা দুদিক দিয়ে লাভবান হয়ে আসছেন।

এছাড়া কার্টমন, বারি-৪, ব্যানানা, বারি-১৮ জাতের আম সারাবছর পাওয়া যায় এবং দামও বেশ ভাল। এ কারণে যুবকদের একটি বড় অংশ আম বাগান করার দিকে ঝুকে পড়ছে।যাদের নিজস্ব জমি জমা নেই,তারাও অন্যের জমি ১০/১২ বছরের জন্য ভাড়া নিয়ে সেখানে আম্রপালি জাতের রুপালী আমের চাষ করে আসছেন।


এসব কৃষকের মধ্যে সারা বছর অনলাইনে আম বিক্রি করে আলোচনার শীর্ষে রয়েছেন সাবেক ছাত্রনেতা এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র সাইফুর রহমান বাদশা। তার নিজস্ব বাগানে উৎপাদিত আম স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে তিনি অনলাইনে সারা দেশে সরবরাহ করে আসছেন। আলোচিত এই কৃষি উদ্যোক্তাকে দেখে অন্যরা আমবাগান করার জন্য অনুপ্রাণিত হচ্ছেন।


কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, জেলার বালিয়াডাঙ্গী এলাকায় সূর্যাপুরী জাতের আম বাগান সবচেয়ে বেশি। নতুন করে পীরগঞ্জ ,রানীশংকৈল ও হরিপুর উপজেলায় আম বাগানের সংখ্যা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে জেলায় আম বাগানের পরিমান ৮ হাজার ২৯ হেক্টর।আর আম বাগানের সংখ্যা ১ হাজার ৫১৪টি ।পীরগন্জ-হরিপুর সড়কে গেলে এখন চোখে পড়বে রাশি রাশি আম বাগান।


পীরগঞ্জের চাঁদপুর এলাকার মনোয়ার হোসেন, আব্দুর রাজ্জাক নামে একাধিক আম চাষী জানান এক বিঘা জমিতে আম্রপালি জাতের গাছ লাগানো যায় কমপক্ষে ১৬০টি। ৩ বছরের মাথায় প্রতিটি গাছ থেকে এক ক্যারেট (২০ কেজি) আম পাওয়ায় যায়। প্রতি কেজি ৫০ টাকা হারে এক ক্যারেটের দাম ১ হাজার টাকা। সে হিসেবে একবিঘা জমিতে প্রাপ্ত আম বিক্রি হয় ১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা।আর প্রথম বছর যে আম পাওয়া যায় পরের বছর পাওয়া যায় তার দ্বিগুন। এভাবে প্রতি বছর আম ও লাভের পরিমাণ বাড়তে থাকে ৯ বছর পর্যন্ত।


আম বাগান মালিক জাহিদ বলেন, যখন সারাদেশে বিভিন্ন জাতের আম শেষ হয়ে যায় তখন রুপালী জাতের আমটি পাকার উপযুক্ত হয়।ওইসময় আমের চাহিদা বেশি থাকায় আমরা বেশি দামে আম বিক্রির সুযোগ পেয়ে লাভবান হই।


এছাড়াও আম্রপালির আম গাছ বেশি বড় না হওয়ায় গাছের মাঝামাঝি ফাঁকা জায়গায় ধান গম পাট, আলু, মরিচসহ বিভিন্ন ফসল সাথী ফসল হিসেবে চাষ করে চাষীরা লাভবান হচ্ছেন।সেই সাথে ফল মওসুমে নিজেরাও বিষমুক্ত মিষ্টি আম ভোগ করতে পারেন এবং বিভিন্ন বন্ধু–বান্ধব ও আত্বীয় স্বজনকে মওসুম শেষে আম দিতে পারলে তারা বেশ খুশি হয়।


উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বললেন, ১০ বছর পর আমের ফলন কমে যায়। তখন আম গাছের ডগা এক থেকে দেড় ফুট কেটে ফেললে সেখানে নতুন করে কুশি গজাবে । নতুন করে ডালপালা গজাবে।তাতে করে আগের মতোই আমের ফলন হবে।পরবর্তীতে টপ অরকিং করা হলে আমের ফলন আবারও বাড়ানো সম্ভব।


এ ব্যাপারে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ পরিচালক কৃষিবিদ মো: সিরাজুল ইসলাম বলেন, ঠাকুরগাঁও জেলায় ১০ বছর পূর্বে যে আম বাগান ছিল। বর্তমানে আম বাগানের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধু পীরগঞ্জ উপজেলায় ১০ বছর পূর্বে আমের বাগান ছিল ৫৫০ হেক্টর। বর্তমানে আম্রপালি জাতের আমের বাগানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৮০ হেক্টর জমিতে। আম বিক্রি করে চাষী ও বাগান মালিকরা লাভবান হওয়ায় দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে আমের বাগান।

মন্তব্য করুন