প্রকাশিত: ১০ ঘন্টা আগে, ১০:১১ এ এম

অনলাইন সংস্করণ

থমথমে গোপালগঞ্জ, চলছে বিশেষ অভিযান

 

সদরুল আইনঃ

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পদযাত্রা ঘিরে দিনভর দফায় দফায় হামলা, সংঘর্ষ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের পর রাত থেকে চলছে কারফিউ।

 তুমুল সংঘর্ষের পর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে গোপালগঞ্জের সাধারণ মানুষের মধ্যে। এরই মধ্যে পুলিশের ওপর হামলা, গাড়িতে অগ্নিসংযোগসহ দফায় দফায় হামলা-সংঘর্ষে জড়িতদের ধরতে অভিযান চলছে বলে জানিয়েছে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) সকালে অনেকটাই থমথমে পরিস্থিতি দেখা গেছে গোপালগঞ্জজুড়ে। মূল সড়কগুলোকে সকাল থেকে চোখে পড়েনি অভ্যন্তরীণ রুটের যানবাহন, বন্ধ ছিল দোকানপাট-বাজার। 

তবে বিভিন্ন অলিগলির সড়কের মানুষের চলাচল দেখা গেছে। কিছু এলাকায় খুলেছে খাবারের দোকান-হোটেল।

সংখ্যায় কম হলেও জরুরি প্রয়োজনে বের হওয়া মানুষ বিভিন্ন গন্তব্যে ছুটছেন। সকাল ৭টা থেকে ৮টা পর্যন্ত সড়কে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তেমন কোনো উপস্থিতি চোখে পড়েনি।

বৃহস্পতিবার সকালে শহরের বিভিন্ন রাস্তা ঘুরে দেখা গেছে, এখনো পড়ে আছে ইটপাটকেল, বাঁশসহ যান চলাচলে নানা প্রতিবন্ধক সামগ্রী। সড়কের পাশে থাকা গাছ কেটে রাস্তার ওপর ফেলেও যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির চেষ্টা করতে দেখা গেছে বেশ কিছু স্থানে।

 আবার সড়ক–মহাসড়কে থাকা বিভিন্ন তোরন ভেঙে ফেলায় রাস্তার ওপর সেগুলো যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। জরুরি প্রয়োজনে যারা ঘর ছেড়ে বেরিয়েছেন তাদের চোখে মুখে দেখা গেছে আতঙ্কের ছাপ।
 
ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে গোপালগঞ্জ চক্ষু হাসপাতালের সামনে বৃহস্পতিবার সকালে গাছ কেটে ফেলে রাখা হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

গোপালগঞ্জ শহরের পৌরসভার সামনে গ্রাম পুলিশ ও পরিচ্ছন্নকর্মীদের দেখা গেছে। পরিচ্ছন্ন কর্মীরা শহর সাফাইয়ের কাজ করছিলেন।

মো. ইকবাল হোসেন নামে এক বাসিন্দা বলেন, ‘গতকাল সংঘর্ষের সময় ঘরেই ছিলাম। আমার মেয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছে, সঙ্গে তার মা আছে। গতকাল খাবার নিয়ে যেতেও পারিনি। 

তাই আজ সকাল সকাল বের হয়ে সেখানে যাচ্ছি। বেলা বাড়ার পর পরিস্থিতি আবারও খারাপ হয় কি-না সেই চিন্তা করে সকালেই রওনা দিয়েছি।’

সকাল সাড়ে আটটা পর্যন্ত শহরের অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ ছিল। তবে বিভিন্ন মোড়ে চায়ের দোকান ও রেস্তোরাঁ খোলা হয়েছে। সেখানে মানুষের জটলা দেখা যায়। কাঁচা বাজার এলাকায় রাস্তার পাশে বেশ কিছু ফলের দোকানে লোকজন ছিলেন।

মাহফুজ আলম নামে এক অটোরিকশা চালক বলেন, কারফিউ জারি হয়েছে। তাই গাড়ি নিয়ে বের হয়নি। রাস্তাঘাটেও মানুষজন তেমন নেই। অভ্যন্তরীণ রুটের গাড়িগুলোও ছাড়েনি। তবে ঢাকাসহ দূরপাল্লার গাড়িগুলো চলছে। গতকাল সংঘর্ষের পর থেকে ভয়ে আছি।

এদিকে পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গোপালগঞ্জ শহরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক আছে। তবে পরিবেশ কিছুটা থমথমে।

গোপালগঞ্জ সদর সার্কেল পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেন, গোপালগঞ্জের পরিস্থিতি স্বাভাবিক, তবে থমথমে। কারফিউ বলবৎ আছে।

 গতকাল সন্ধ্যা থেকেই গোপালগঞ্জে বিশেষ অভিযান পরিচালনা হচ্ছে। সেনাবাহিনীর অধীনে এটি পরিচালনা করছে পুলিশ ও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।

এর আগে বুধবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গোপালগঞ্জে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের কর্মীদের সংঘর্ষে অন্তত চারজন নিহত হওয়ার খবর এসেছে। 

এনসিপির কর্মসূচি ঘিরে মঙ্গলবার থেকেই গোপালগঞ্জ শহরে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালানো হয়। 

বুধবার সকালে এনসিপি নেতারা গাড়িবহর নিয়ে শহরে ঢোকার আগেই পুলিশের গাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে ঘটনার সূত্রপাত হয়।

পরে ইউএনওর গাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে। এ পরিস্থিতির মধ্যে বেলা দেড়টার দিকে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কর্মীরা মিছিল নিয়ে এসে গোপালগঞ্জ শহরের পৌরপার্ক এলাকায় সমাবেশ মঞ্চে হামলা চালায়।

এক পর্যায়ে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে আশ্রয় নেন। পরে তারা সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া যানে করে পুলিশ সুপার কার্যালয় ছাড়েন।

 দুপুরে জেলা শহরে ১৪৪ ধারা জারি করে স্থানীয় প্রশাসন। তাতেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় সন্ধ্যায় কারফিউ জারির ঘোষণা আসে।

মন্তব্য করুন