প্রকাশিত: ৭ ঘন্টা আগে, ০৮:২৪ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

চিলাহাটি রেলস্টেশনের আইকনিক ভবনে অভ্যন্তরীণ অফিস চালু

 

 

আবু ছাইদ, ডোমার প্রতিনিধি ঃ

নীলফামারী ১৫ জুলাই মঙ্গলবার দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে আনুষ্ঠানিকভাবে চিলাহাটি আইকনিক রেলস্টেশন ভবনটি রেল কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয় এবং ভবনটি অভ্যন্তরীণ রুটে কার্যক্রম শুরু করে।

হস্তান্তর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের ডিভিশনাল রেলওয়ে ম্যানেজার লিয়াকত শরীফ খান। তাঁর হাত দিয়েই স্টেশন ভবনটি হস্তান্তর করা হয় একই সাথে ফাংশনাল ভবনটি"ও হস্তান্তর করা হয়েছে। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ডিভিশনাল ট্রান্সপোর্ট অফিসার হাসিনা খাতুন, ডিভিশনাল কমার্শিয়াল অফিসার গৌতম কুমার কুন্ডু এবং ট্রাফিক ইনস্পেক্টর হাবিবুর রহমানসহ রেলওয়ের অন্যান্য কর্মকর্তা।

চিলাহাটির এই আধুনিক রেলস্টেশন ভবনে অভ্যন্তরীণ ট্রেন চলাচলের জন্য স্টেশন অফিস চালু হওয়ায় স্থানীয় জনগণ আনন্দিত এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। ভোগডাবুড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ডোমার উপজেলা বিএনপি'র সভাপতি রিয়াজুল ইসলাম কালু বলেন কাজ খুবই ভালো হয়েছে এবং দৃষ্টিনন্দন হয়েছে। একে রক্ষণাবেক্ষণ করাই এখন দায়িত্বে থাকা রেল কর্মকর্তা কর্মচারীদের আসল ব্যাপার। ইহা আমাদের জনগণের সম্পদ ,ইহাকে রক্ষনাবেক্ষণ করাটা আমাদেরও দায়িত্ব।তিনি আশা করছেন, বিএনপি ক্ষমতায় আসলে পুনরায় আন্তর্জাতিক ট্রেন যোগাযোগ চালু হবে।

রেল যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে স্টেশন চত্বরে বসানো হয়েছে ১৬টি সিসি ক্যামেরা। এর মধ্যে ১৩টি কাস্টমসের আওতায় এবং ৩টি রেল কর্তৃপক্ষের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হবে।

নতুন করে চালু হওয়া স্টেশন ভবনের মধ্যে রয়েছে স্টেশন মাস্টারের কক্ষ, টিকিট কাউন্টার, যাত্রীদের জন্য পর্যাপ্ত বসার জায়গা এবং পর্যাপ্ত টয়লেট। ভবনটি পুরোদমে চালু হলে আরও যুক্ত হবে ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট, মানি এক্সচেঞ্জ অফিস, দুটি ফাস্টফুড দোকান এবং তিন তলায় একটি খাবার হোটেল, যেখানে যাত্রী ও ভ্রমণকারীরা বিশ্রাম ও খাবারের সুবিধা পাবেন।

চিলাহাটি রেলস্টেশনের রয়েছে একটি দীর্ঘ ও গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট। ১৮৭৮ সালে বৃটিশ আমলে পূর্ব ও পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে রেল যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার অংশ হিসেবে চিলাহাটি হয়ে কলকাতা ও দার্জিলিং পর্যন্ত রেল চলাচল শুরু হয়। দেশভাগের পরও এই রুটে ট্রেন চলত। তবে ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় চিলাহাটি-হলদিবাড়ী রুটে ট্রেন চলাচল সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যায় এবং পরে দীর্ঘ ৫৫ বছর ধরে তা বন্ধই ছিল।

এই দীর্ঘ বন্ধের অবসান ঘটে ২০২০ সালের ১৭ ডিসেম্বর, যখন চিলাহাটি-হলদিবাড়ী রুটে আবারও মালবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হয়। এরপর ২০২১ সালের ২৭ মার্চ যাত্রীবাহী মিতালি এক্সপ্রেস ট্রেনের উদ্বোধন করা হয়। এটি দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক হয়ে ওঠে।

মিতালি এক্সপ্রেস ট্রেনটি সপ্তাহে দুই দিন ঢাকা ও শিলিগুড়ির মধ্যে চলাচল করত। রবিবার ও বুধবার নিউ জলপাইগুড়ি থেকে এবং সোমবার ও বৃহস্পতিবার ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে ট্রেনটি ছেড়ে যেত। শিলিগুড়ি থেকে ঢাকা পর্যন্ত প্রায় ছয়শ কিলোমিটার রেলপথ অতিক্রম করতে সময় লাগত প্রায় ১১ ঘণ্টা ৩০ মিনিট।

তবে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট ২০২৩ থেকে ট্রেনটি সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে। দুই দেশের পারস্পরিক সমঝোতায় পুনরায় চালুর বিষয়ে আলোচনা চলছে। এলাকাবাসী আশা করছে, রেল যোগাযোগ আবার চালু হলে উত্তরাঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্য, পর্যটন ও আন্তঃদেশীয় যোগাযোগে নতুন গতি আসবে।

চিলাহাটি রেলস্টেশন ভবনের ভেতরে ইমিগ্রেশন অফিস ইতোমধ্যে প্রস্তুত রয়েছে। এটি চালু হলে যাত্রীদের আর ঢাকায় গিয়ে ইমিগ্রেশন করতে হবে না। এই সুবিধার মাধ্যমে যাত্রীরা যেমন সময় ও অর্থ সাশ্রয় করতে পারবেন, তেমনি চিকিৎসা, পর্যটন, শিক্ষা বা ব্যবসার উদ্দেশ্যে ভারতের বিভিন্ন গন্তব্যে যাতায়াত সহজ হবে। একইসঙ্গে এই রুটে পণ্য আমদানি-রপ্তানি, কৃষিপণ্যের রফতানি এবং হোটেল-রেস্তোরাঁ ও পরিবহন ব্যবসায় কর্মসংস্থানের সুযোগও বাড়বে।

চিলাহাটি এখন আর কেবল একটি স্টেশন নয়—এটি এক সম্ভাবনার নাম, এক ঐতিহাসিক পুনর্জাগরণ। এখান থেকে শুরু হতে পারে দক্ষিণ এশিয়ার আন্তঃদেশীয় সম্পর্কের এক নতুন অধ্যায়।

মন্তব্য করুন