প্রকাশিত: ১০ ঘন্টা আগে, ০৪:০৮ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

বাণিজ্যের নামে গোপন চুক্তি জুলাইয়ের চেতনা বিরোধী : বাংলাদেশ ন্যাপ



‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান আগামী দিনে দেশের স্বার্থ বিরোধী, জনবিরোধী যে কোন শাসকের বিরুদ্ধে আন্দোলনের অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে। যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক বাংলাদেশের ওপর চাপিয়ে দেওয়া একতরফা শর্তাবলির মাধ্যমে যে কোন গোপন চুক্তি স্পষ্টতই জুলাইয়ের চেতনা বিরোধী’ বলে মন্তব্য করে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ শীর্ষ নেতৃদ্বয় বলেছেন, ‘বাণিজ্যের নামে কোনো গোপন চুক্তি দেশবাসী মানবে না, মানতে পারে না। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে অর্জিত নতুন রাজনীীতর পথে এ ধরনের গোপন চুক্তি বাঁধা হয়ে দাড়াবে। এ ধরনেরে যে কোন চুক্তি সম্পাদন থেকে অর্ন্তবর্তীকালিন সরকারকে বিরত থাকতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক আগ্রাসন ও দেশের অর্থনৈতিক রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’

বুধবার (১৬ জুলাই) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বাংলাদেশ ন্যাপ চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি ও মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া এসব কথা বলেন।

তারা “যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আলোচনার পর যে সকল চুক্তি হবে তা প্রকাশ করা যাবে না” বাণিজ্য উপদেষ্টার এমন বক্তব্যে গভীর উদ্বেগ ও উৎকন্ঠা প্রকাশ করে বলেন, ‘যে চুক্তি প্রকাশ করা যায় না, সে চুক্তি দেশের স্বার্থ বিরোধী, সে চুক্তি পতিত স্বৈরাচার হাসিনার চুক্তি। ফ্যাসনীবাদী শেখ হাসিনাও এভাবে ভারতের সাথে বাংলাদেশের স্বার্থ বিরোধী অসংখ্য চুক্তি করেছে যার বেশিরভাগ এখনো বর্তমান সরকার প্রকাশ করে নাই। আবার সেই পতিত স্বৈরাচারী সরকারের মত করে অর্ন্তবর্তীকালিন সরকারও যদি একই কাজ করে তাহলে নতুন বন্দোবস্ত কোথায়? এত পুরাতন বন্দোবস্তোর পুনরাবৃত্তি মাত্র। প্রশ্ন জাগে এই কারণেই শহীদ আবু সাঈদ আর মুগ্ধরা তাদের জীবর উৎসর্গ করেছে।’

নেতৃদ্বয় বলেন, ‘ইউএসটিআরের গোপন চিঠি বাংলাদেশ সরকার প্রকাশ করে নাই। তবুও ইতোমধ্যে একটি পত্রিকায় এ বিষয়টি দেশবাসীর গোচরে এসেছে। এতে যা দেখা যাচ্ছে, তা হলো বাংলাদেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত শর্তাবলি একপ্রকার অর্থনৈতিক উপনিবেশবাদ। এ বিষয়ে সরকারকে অবশ্যই চুক্তি জনসম্মুখে প্রকাশ করতে হবে দেশ ও জাতির স্বার্থে। এই গোপন চুক্তির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে চীনা পণ্য বর্জন, সামরিক সরবরাহে মার্কিন নির্ভরতা বাড়ানো এবং ডিজিটাল নীতিতে হস্তক্ষেপের মাধ্যমে দেশের স্বাধীন নীতিনির্ধারণ ক্ষমতাকে ধ্বংস করতে চাইছে।’

তারা আরো বলেন, ‘এমন একটি চুক্তি যার সাথে দেশের স্বার্থ ও সার্বভৌমত্ব জড়িত, কেবল অর্থনীতি নয়, দেশের নিরাপত্তা ও পররাষ্ট্র নীতি প্রবলভাবে জড়িত, সে ধরনের একটি চুক্তি করার অধিকার কী বর্তমান অর্ন্তবর্তীকালিন সরকারের আছে ? এ ধরনের চুক্তি করার ম্যান্ডেট জনগণ কি এই সরকারকে দিয়েছে ? রাষ্ট্রের জন্য চুক্তি হবে কিন্তু কেন প্রকাশ করা যাবে না ? সেটা কেন সরকারের উপদেষ্টাদের ভরতে হবে চুক্তি প্রকাশ করা যাবে না। তাহলে তো দেশবাসী ধরেই নিতে পারে এই চুক্তি দেশ বিরোধী ও রাষ্ট্র বিরোধী।’

নেতৃদ্বয় বলেন, ‘কোন চুক্তি গোপন করার অর্থই হলো সেই চুক্তিতে দেশবিরোধী বিপদজনক কিছু অবশ্যই আছে। যে চুক্তি প্রকাশ করা যাবে না, সেই চুক্তি অর্ন্তবর্তীকালিন সরকার করতে পারবেন না? সে চুক্তি করতে দেয়া হবে না। এরকম চুক্তি যদি করতেই হয় তাহলে, সকল রাজনৈতিক দলের সাথে বসতে হবে। তাদের সাথে আলাপ-আলোচনা করতে হবে, তাদের মতামত নিতে হবে। যেভাবে সংস্কারের ব্যাপারে আলোচনা করছেন, এভাবে ধারা-ধারা ধরে তাদের সাথে আলোচনা করতে হবে। সকলের সাথে আলোচনার পর জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতেই কেবল এ ধরনের চুক্তি করা যেতে পারে।’

বাংলাদেশ ন্যাপ নেতৃদ্বয় বলেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর দেশের রাজনৈতিক দলগুলো, এমনকি ইসলামিক ও বাম দলগুলো সংস্কার প্রস্তাবের নামে ক্ষমতার ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে ব্যস্ত। অথচ রাষ্ট্রের স্বার্থ ও সার্বভৌমত্বের সাথে জড়িত বন্দর, করিডোর, জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের কার্যালয় স্থাপন, স্টার লিংক, ইউএস ট্যারিফ চুক্তি এগুলো নিয়ে মুখে কুলুপ এটেছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে দেশের রাজনীতিবিদরাও ব্যবসায়ী শ্রেণি ভুক্ত এবং তাদের একটা বড় অংশ ইউএস সিটিজেন বা রেসিডেন্ট কার্ড ধারী সে কারণে তারা আজ নীরব।’

তারা বলেন, ‘জনগণকে না জানিয়ে দেশের স্বার্থ বিরোধী এ ধরনের কোন চুক্তি করা যাবে না। অবশ্যই আমেরিকার সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখতে চাই। কিন্তু সেটা রাষ্ট্রের স্বার্থ, সার্বভৌমত্ব, কর্তৃত্ব ও মর্যাদা ক্ষুন্ন করে নয়। যে কোন চুক্তির শর্তাবলি গোপন রাখা হচ্ছে, যা গণতান্ত্রিক স্বচ্ছতার পরিপন্থী। জনগণের সম্মতি ছাড়া এমন চুক্তি গ্রহণযোগ্য নয়। আর অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের এ ধরনের কোনো চুক্তি করার অধিকার নেই। দেশের স্বার্থবিরোধী যে কোনো সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রুখে দাঁড়াতে হবে।’

মন্তব্য করুন