
প্রকাশিত: ৪ ঘন্টা আগে, ১০:৫১ এ এম
অনলাইন সংস্করণ
মোঃএনামুল হক পঞ্চগড় জেলা প্রতিনিধিঃ
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় বোমা মেশিন (খননযন্ত্র) দিয়ে অবাধে পাথর উত্তোলন চলছেই। স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ ও বিজিবির অব্যাহত অভিযানের পরও তা বন্ধ হচ্ছে না।পরিবেশবাদীরা জানান, এসব যন্ত্র দিয়ে পাথর উত্তোলন চলতে থাকলে ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয় ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। এভাবে পাথর তুললে ভূমির অভ্যন্তরে গভীর খাদের সৃষ্টি হয়। মাটির গভীরে শূন্যতা তৈরি হয়। ভূমিধসসহ ভূমিকম্পের অন্যতম কারণ এটি। অসাধু একটি ব্যবসায়ী চক্র পুলিশের চোখকে ফাঁকি দিয়ে রাতের অন্ধকারে এসব যন্ত্র দিয়ে পাথর তুলছে। এর প্রতিবাদে উপজেলার ভজনপুরে ‘ভূমি রক্ষা কমিটির’ ব্যানারে মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী।
সরেজমিনে দেখা গেছে,তেতুলিয়া
উপজেলার দেবনগড় ইউনিয়নের ময়নাগুড়ি, ভুটুজোত, পাঠানপাড়া, ধানশুকা, কায়লামনি ও শিবচন্ডি নামক এলাকায়; ভজনপুর ইউনিয়নের গনাগছ, ভদ্রেশ্বর, সংগঠন (মুর্খাজোত), কির্তনপাড়া, ভাঙ্গিপাড়া, প্রধানগছ(শালবাড়ী), খুনিয়াগছ ও বকলাহাটি(চুয়ামতি ও চারপাড়া) নামক এলাকায়; বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের ডাহুক ব্রীজ সংলগ্ন ও ডাহুক নদীর বিভিন্ন স্থানে; শালবাহান ইউনিয়নের বালাবাড়ি (সানু বালাবাড়ি), লোহাকাচি (বন বিভাগের জমিতে) এবং তেঁতুলিয়া সদর ইউনিয়নের বড়বিল্লাহ,
ভজনপুর, শিবচণ্ডী, বুড়াবুড়ি, মাঝিপাড়া রাতের অন্ধকারে ৫০টিরও বেশি যন্ত্র দিয়ে পাথর উত্তোলন চলছে। যন্ত্রগুলো বিভিন্ন নদী, নদী-তীরবর্তী এলাকা, খাসজমি, ফসলি জমি ও পুকুরে বসানো হয়েছে। বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে উত্তোলনকারীদের প্রতিনিধি পাহারা দেয়। পুলিশ, বিজিবি দেখলেই তাঁরা সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীকে খবর দেন।
স্থানীয়রা বলেন, প্রশাসনকে এসব মেশিন চালক ও ব্যবসায়ীদের একটি নামের তালিকা দেওয়া হয়েছে। স্থানীয়ভাবে গড়ে ওঠা ‘ভূমি অধিকার রক্ষা কমিটির
উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান পাথর শ্রমিক আন্দোলন নেতা মুক্তারুল হক মুকু,
ডিজার হোসেন বলেন, রাতের অন্ধকারে স্থানীয় দলীয় নেতাদের সহযোগিতায় প্রকাশ্যে এসব বোমা মেশিন চলছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বোমা মেশিন ব্যবসায়ী জানান, প্রতি রাতে মেশিন চালালে দালালের মাধ্যমে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, পুলিশ ও রাজনৈতিক নেতাদের মেশিন-প্রতি চার হাজার টাকা দিতে হয়।
তেঁতুলিয়া থানার ভরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (oc),মুসা মিয়া
জানান, পুলিশ প্রতি রাতেই টহল দেয়। কিন্তু কে বা কারা পুলিশ দেখলেই ব্যবসায়ীদের খবর দেয়। খবর পেয়ে তাঁরা মেশিন বন্ধ করে পালিয়ে যান। এর মধ্যে থানায় বোমা মেশিন-সংক্রান্ত মামলা হয়েছে। কিন্তু আসামিরা জামিন পেয়ে আবার পাথর উত্তোলন শুরু করে। অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
জেলা পরিবেশ পরিষদের সভাপতি ও পঞ্চগড় সরকারি মহিলা কলেজের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের প্রধান তৌহিদুল বারী বলেন, এভাবে পাথর তোলা বন্ধ না হলে অচিরেই পরিবেশ বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে পঞ্চগড়বাসীকে চরম মূল্য দিতে হবে।তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আফরোজ শাহীন খসরু’
.বলেন, বোমা মেশিনে পাথর তোলা বন্ধে গণসচেতনতা তৈরি করতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অনেক মেশিন জব্দ করে মামলা দেওয়া হয়েছে। তারপরও বন্ধ করা যাচ্ছে না। সব মহলের সহযোগিতাও পাওয়া যাচ্ছে না। এ বিষয়ে পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক সাবেত আলী বলেন, ‘বোমা মেশিন বা ড্রেজার দিয়ে পাথর উত্তোলন বন্ধে এলাকায় সভা করেছি। এভাবে পাথর উত্তোলন করতে দেওয়া হবে না।’
পাথর উওোলন বিষয়ে পঞ্চগড়-১৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মনিরুল ইসলাম বলেন
ড্রেজার দিয়ে পাথর উত্তোলন বন্ধে বিজিবি কাজ করেছে।
মন্তব্য করুন