ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২৬ জুন, ২০২৪, ০৭:৪৩ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

ধরলার তীব্র ভাঙ্গনে ফুলবাড়ীতে নিঃস্ব হচ্ছে মানুষ

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে বর্ষার শুরুতেই আগ্রাসী রূপধারণ করেছে ধরলা নদী। উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের পশ্চিম ধনিরাম গ্রামের মেলেটারির চরে অব্যাহত ভাঙ্গনে নদী গিলছে যাতায়াতের রাস্তা, বসতভিটা, ফসলি জমি। ধরলার কড়াল গ্রাসে দিনেদিনে বাড়ছে পশ্চিম ধনিরাম গ্রামের নদীতীরবর্তী নিঃস্ব মানুষের সংখ্যা। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে- ধরলার তীব্র ভাঙ্গনে স্থানীয় বাসিন্দাদের বসতবাড়ি, যাতায়াতের রাস্তা ও ফসলি জমি ধরলায় গিলে খাচ্ছে। ভাঙ্গন কবলিত এলাকার সিরাজুল ইসলাম ও মজিবর রহমান বলেন- ধরলার অব্যাহত ভাঙ্গনের ফলে আমরা সর্বশান্ত হয়ে যাচ্ছি। সপ্তাহ খানেকের মধ্যে আমাদের গ্রামের অনেকের বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। মোস্তফা সরকার ও আবুল হোসেন বলেন, আমাদের এখানকার শত শত একর আবাদি জমি ধরলার পেটে চলে গেছে। আমাদের যাতায়াতের রাস্তা নদীতে বিলীন হয়েছে। আমাদের এখন জমির আইল দিয়ে চরম ভোগান্তি নিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। 

ধরলার ভাঙ্গনের ক্ষতিগ্রস্ত মনির উদ্দিন (৭৫) বলেন, দীর্ঘদিনেও ভাঙ্গনরোধে কোন ব্যবস্থা না নেয়ার ফলে আমি আজ নিঃস্ব। আমার ৫০ বিঘা ফসলি জমি ছিল। সেই জমিতে অনেকেই কাজ করে খেত। একে একে সব জমি আমার নদীর পেটে চলে গেছে। বর্তমানে সব হারিয়ে আমি এই বৃদ্ধ বয়সে অন্যের জমিতে কাজ করে খাই। বাড়িভিটে টুকু ছাড়া আমার আর কিছুই নেই। তাও ধরলা কেড়ে নিতে চাচ্ছে। এটুকু গেলে থাকবো কোথায় বলেই হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন তিনি।

নূর মোহাম্মদ (৬৫) বলেন, আমার সাত বিঘা ফসলি জমি ছিল। তাতে চাষাবাদ করে সংসার চালাতাম। ধরলার ভাঙ্গন রোধে কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় আমার সমস্ত জমি নদীর পেটে চলে গেছে। আজ আমি নিঃস্ব। খাব কি, থাকবো কোথায়? আমার মত এখানে অনেকেই জমিজমা হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে। 

ধরলার তীব্র ভাঙ্গনে ভিটেমাটি হারা মহির আলী, হযরত আলী, কলিম উদ্দিন, ফজলু মিয়া, নূর হোসেন, মোহর আলী অনেকটা আক্ষেপের সুরে বলেন-  ভাঙ্গনরোধে ব্যবস্থা নিলে আজ আমাদের বাপ-দাদার ভিটেমাটি হারাতে হতো না। আসলে আমাদের সীমাহীন দুঃখ-দুর্দশা দেখার কেউ নেই! 

ধরলার ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শনে এসে বড়ভিটা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মিন্টু বলেন, ভাঙ্গনের ফলে এখানকার মানুষ নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছেন। অনেক মানুষের শত শত বিঘা ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়েছে। এবারের ভাঙ্গনে এখন পর্যন্ত ২২ টি পরিবার বসতভিটা  হারিয়েছেন। ভাঙ্গনের হুমকিতে রয়েছে আরো অন্তত ৩০ টি পরিবার। ভাঙ্গন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে এই এলাকা পুরোপুরি বিলীন হয়ে যাবে। আমি এমপি মহোদয়, পানি উন্নয়ন বোর্ড, উপজেলা প্রশাসনের কাছে এই এলাকাটি রক্ষার অনুরোধ জানাবো। 

এবিষয়ে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান বলেন, ওই এলাকার নদী ভাঙ্গনের বিষয়ে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আমাকে জানিয়েছিলেন। ভাঙ্গন কবলিত এলাকাটি চরাঞ্চল হওয়ায় সেখানকার ভাঙ্গন রোধে আপাতত কোন ব্যবস্থা আমরা নিতে পারছিনা। চরের ভাঙ্গন রোধে  কাজ করার কোনো নির্দেশনা নেই। ওখানে কাজ করার নির্দেশনা যদি পাই তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রেহেনুমা তারান্নুম বলেন, নদী ভাঙ্গন রোধে কাজ করার মত সক্ষমতা উপজেলা প্রশাসনের নেই। তবে ওই এলাকা সরজমিন পরিদর্শন করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জানাবেন। পাশাপাশি নদী ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদেরকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাধ্যমত সহযোগিতা করা হবে বলেও জানান তিনি। 

মন্তব্য করুন