
প্রকাশিত: ৪ ঘন্টা আগে, ০৫:৫৪ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়াঃ
শনিবার সামাজিহক যোগাযোগড় মাধ্যমে দেখা গেলে মহান মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ছবিতে কয়েকজন পাড়াচ্ছে এ ধরনের এক ভিডিও। সেই থেকে মনে প্রশ্ন উদয় হয়েছে এরা কারা ? কি চায় এরা ? এরা কি শহীদ জিয়াউর রহমানকে চিনে নাকি তার সম্পর্কে জানে ? আর যেনে মুনে যদি তারা এমন ধৃষ্টতা দেখায় তাহলে ধরে নিতেই হবে তারা বাংলাদেশের পক্ষের শক্তি নয়। তারা গণতেন্ত্রর পক্ষের শক্তি নয়। তারা বাংলাদেশে পরাজিত শক্তি। রাজনীতিতে পানি ঘেলা করে নতুন কোন অপশক্তির জন্ম দিতে চায়। রাজনীতিতে মতপার্থক্য থাকবে আবার মতবিরোধও থাকবে। বিএনপির সাথে আমার অবশ্যই মত পার্থক্য রয়েছে রয়েছে মতের ফারাক। তাই বলে একজন মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ ও বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা জিয়াউর রহমানের ছবিতে পা মারানোর দুঃশাহস দেখায় কি করে তারা ?
আজকের বিএনপির কর্মকান্ডের জন্য সমালোচনা করুন প্রয়োজনের আপনার পছন্দ না হলে বিএনপিকে প্রত্যাখান করতে পারেন । প্রয়োজনে বিএনপিকে প্রত্যাখ্যানের আওয়াজও তুলতে পারেন। জনগন যদি আপনাদের আওয়াজে সারা দেন তাহলে আপনারা বিজয়ী হবেন। তাই বলে, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে অপমান করতে হবে কেন ? জিয়উর রহমানকে যারা অপমান করেন, তারা বলেন তো আপনি আপনার দেশের ইতিহাসে তাহলে নেতা মানবেন কাকে?
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াকে যারা অপমান করেন, তারা কি জিয়ার সমতুল্য কোনো রাষ্ট্রনায়কের গল্প শুনাতে পারবেন আমাদের? এমন কাউকে, যাকে আমরা অনুসরণ বা অনুকরণ করে নিজেদের আরো যোগ্য ও দক্ষ করে গড়ে তুলবার প্রেরণা পাবো? অতিরিক্ত কইরেন না, অতিরিক্ত কোন কিছুই মঙ্গলজনক নয়। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে শেখ হাসিনার কায়দায় অপমান অপদস্ত করার মাধ্যমে আপনারা আসলে বাংলাদেশকে অপমান অপদস্ত করছেন। জিয়াউর রহমান যদি ইতিহাসে সম্মান ও শ্রদ্ধার পাত্র না হয়, আপনি, আমি কেউই নতুন ইতিহাস রচনা করতে পারবো না। এটা সম্ভব না। সম্ভব হবে না!
এ চর্চা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশে কোনো অবিসংবাদিত নেতা আর তৈরি হবে না বা কেউই অবিসংবাদিত হওয়া সম্ভব না বিধায় সে চেষ্টাই আর করবে না! অর্থাৎ একটা সময় দেশ নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়বে। তাই, যারা বুঝে না বুঝে এসব জঘন্য অপরাধ করছেন, তারা প্রকারান্তরে দেশকে নেতৃত্বশূন্য করার চক্রান্তেই পা দিচ্ছেন! তাই, আমি অনুরোধ করবো শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান কে তো নয়ই, আপনারা তারেক রহমানকেও সমালোচনা করার ক্ষেত্রে শব্দ ও পদ্ধতির দিকে সতর্ক হোন।
মনে রাখবেন, শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান একজন নিছক রাজনৈতিক নেতা বললে তাকে ছোট করা হবে। তিনি ছিলেন একজন রাষ্ট্রনায়ক। তিনি ছিলেন ন্যাশন বিল্ডার। জাতিকে গড়ে তোলা ও জাতিকে একটি দৃঢ়ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠা করা, এই দায়িত্ব ও কর্তব্য তিনি পালন করেছেন। এটি করতে গিয়ে তাকে জাতি গঠনমূলক অনেক কাজ করতে হয়েছে।
বাংলাদেশের জাতীয় রাজনীতিতে জিয়াউর রহমান নব ধারার স্রষ্টা হিসাবে খ্যাত ও স্মরণীয়। তিনি একটি রাজনৈতিক দর্শন উপহার দেন। সেই দর্শনের ভিত্তিতে একটি কর্মসূচি প্রণয়ন করেন এবং সেই কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য গড়ে তোলেন একটি রাজনৈতিক দল। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) তার প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল। জিয়াউর রহমান সূচিত রাজনৈতিক ধারাটি দেশের সবচেয়ে বৃহত্তম রাজনৈতিক ধারা। এই ধারাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রধান দায়িত্ব দলের নেতাকর্মীদের। দুঃখজনক হলেও বলতে হচ্ছে, তার রাজনীতি থেকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল অনেকটাই দূরে সরে গেছে। নবপ্রজন্মের নেতানেত্রীদের এটা আমলে নিতে হবে এবং তার রাজনীতি যথাস্থানে প্রতিষ্ঠার নিরাপোস ব্রতচারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে।
জিয়াউর রহমানের রাজনৈতিক দর্শন ও কর্মসূচির লক্ষ্য : দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তা সুরক্ষিত করা, শোষণমুক্ত, ন্যায় ও সুবিচারভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা, বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মাধ্যমে তৃণমূল পর্যায়ে জনগণের ক্ষমতায়ন করা। জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে জাতীয় উৎপাদন ও উন্নয়ন কার্যক্রম নিশ্চিত করা, অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা অর্জন করা, ধর্মীয় মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করা, জাতীয় ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির বিকাশ সাধন করা এবং আন্তর্জাতিক পরিম-লে বাংলাদেশ ও বাংলাদেশী জাতিকে গৌরবময় মর্যাদাকর আসনে প্রতিষ্ঠা করা। আমরা যদি এসব চাই, অবশ্যই আমাদের জিয়াউর রহমানের রাজনীতির কাছে ফিরে যেতে হবে।
জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর তার মহীয়সী স্ত্রী খালেদা জিয়া দলকে গণতন্ত্রের পথে এগিয়ে নিয়ে যান। তার শাসনামলে তিনি কোনো আপোস করেননি। এটা তার অনেক বড় সাফল্য। তার পরও দেখা যায় জিয়াউর রহমানের যে পথ, সেই পথে দল এগিয়ে যাচ্ছে তা বলা যাবে না। আজকেও দেশে অনেক বড় সংকট যাচ্ছে। এই সংকটে আমাদের সবার উচিত শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের পথ অনুসরণ করা এবং দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এদেশে ‘সমন্বয়ের রাজনীতির’ নতুন ধারা চালু করেছিলেন। বেগম খালেদা জিয়া সেই ধারাকে এগিয়ে নেন এবং বিএনপি অত্যন্ত জনপ্রিয় দলে পরিণত হয়। খালেদা জিয়ার সময়ে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার ‘ইমার্জিং টাইগার’ খেতাবে ভূষিত হয়। তিনি একাধারে স্বৈরশাসকের আতংক, বিএনপির জন্য একটি প্রতিষ্ঠান এবং দানব হাসিনার বিরুদ্ধে আমরণ লড়াকু গণতন্ত্রী যোদ্ধা।
গণতন্ত্রের চলার পথ কখনো মসৃণ হয়নি। এক শ্রেণির স্বার্থান্বেষী দালাল ও তাদের বিদেশি প্রভুদের বহুমাত্রিক ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে গণতন্ত্র তার গতিশীল বলয় থেকে ছিটকে পড়ছে বারবার। বিগত চার দশকেরও অধিককাল ধরে খালেদা জিয়া বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে নিরলস নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি আজ গণতন্ত্রের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছেন। রাজনৈতিক জীবনের নানান চড়াই-উতরাই উত্তরণে তিনি কখনো প্রতিবেশী বা কোনো পরাশক্তির সঙ্গে আপস করেননি। তাই বাংলাদেশের আপামর জনগণ তাকে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক বলেই বিশ্বাস করে।
বাংলাদেশে বেশ কয়েকবার গণতন্ত্র ফিরেছে বেগম খালেদা জিয়ার হাত ধরে। গণতন্ত্রকে সরকারিভাবে প্রাতিষ্ঠাকরণ হয়েছে তার হাত ধরে। নব্বইয়ের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধেও লড়াই করেছেন, গত ১৫ বছর ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধেও লড়াই করেছেন। ওইখানে এক দশক, এখানে ১৫ বছর-দুই যুগ লড়াই করেছেন গণতন্ত্রের জন্য। আবার তিনি তিনবার ক্ষমতায় থেকেও কিন্তু গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার জন্য লড়াই করেছেন। খালেদা জিয়া বারবার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েই এখন জনগণের কাছে একটি আইকন, একটি ভরসার জায়গায় চলে গেছেন।
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এবং বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেসকল কুরুচিপূর্ণ ছবি, ভিডিও কিংবা কন্টেন্ট ছড়ানো হচ্ছে,তা স্রেফ নোংরামি ও নোংরা রাজনীতির বহিঃপ্রকাশ মাত্র। ১৯৭১এর মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বহুদলীয় গণতন্ত্র হত্যার মাধ্যমে বাকশাল প্রতিষ্ঠার বিপরিতে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় জিয়াউর রহমানের অবদান ও বেগম খালেদা জিয়ার আপোষহীনতাকে সমগ্র জাতি সকল সময় সম্মান জানায়। তাদের চরিত্র হনন বা ছোট করার চেষ্টাকারীরা অবশ্যই প্রশ্নবিদ্ধ ? ধারণা করছি জুলাই ঐক্যকে বিনষ্ট করতে পতিত স্বৈরাচার ও তাদের প্রেতাত্মারা অত্যন্ত সুকৌশলে নিজেরা এসব ছবি সোস্যাল মিডিয়াতে প্রচার করে উস্কানি দিচ্ছে।
পাশাপাশি অন্য কোন সংগঠনেরও কেউ যদি এহেন ঘৃণ্য কর্মের সাথে জড়িত থাকে, ওদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা উচিত। মওলানা ভাসানী পরবর্তী রাজনৈতিক ধারায় জিয়াউর রহমানই শিখিয়েছে দেশমাতৃকা ও এর মানুষের সাথে- মাটির সাথে মিশে যেতে হয় কিভাবে।
জিয়াউর রহমান কেন জনপ্রিয় ছিলেন? এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায় মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীর বক্তব্য থেকে। অসুস্থ মওলানা ভাসানীকে হাসপাতালে দেখতে যান তমদ্দুন মজলিশের অধ্যাপক আবদুল গফুরসহ কেউ কেউ। তখন জিয়াউর রহমানকে প্রকাশ্যেই সমর্থন দিচ্ছিলেন ভাসানী। সেদিকে তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করে অধ্যাপক গফুর বলেন, "আপনি ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রধান নেতা। সেই আওয়ামী লীগ ছিল ক্ষমতায়। প্রকাশ্য জনসভায় আপনি আওয়ামী লীগের মন্ত্রীদের বলেছেন, দুর্নীতি করলে, জনগণের জন্য কাজ না করলে তোমাদের পিঠে চাবুক মারা হবে। আপনার নিজের দলের নেতাদেরও এমন কঠোর ভাষায় সমালোচনা করেছেন, আর আজ আপনি জিয়ার প্রতি কেন সমর্থন দিচ্ছেন? জিয়ার প্রতি কেন আপনার এই দূর্বলতা?"
মওলানা ভাসানী বললেন, "আবদুল গফুর, আমি তোমার বাবার বয়সী। আমি আমার জীবনে তোমার চেয়ে বেশি সরকার ও বেশি নেতাদের দেখেছি। ব্রিটিশ আমলে দেখেছি, পাকিস্তান আমলে দেখেছি, বাংলাদেশ আমলেও দেখেছি। তুমি আমাকে একটা এক্সাম্পল দেখাও, কোন রাজনৈতিক নেতা কম-বেশি দুর্নীতি করে নাই বা দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেয় নাই এবং কোন নেতা স্বজনপ্রীতি করে নাই।" অধ্যাপক গফুর চুপ করে রইলেন। ( সৈয়দ আবুল মকসুদ / ভাসানী কাহিনী ॥ [আগামী প্রকাশনী - নভেম্বর, ২০১২ । পৃ: ৪৭-৪৮])
হঠাৎ করে কেন জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়াকে নিয়ে ছড়ানো হচ্ছে নানা কুরুচিপূর্ণ ছবি, ভিডিও কিংবা কন্টেন্ট ? কারা ছড়াচ্ছে? উদ্দেশ্য কী? পরিকল্পিত উস্কানির ফাঁদে কি অনেকেই পা দিয়ে ফেলেছেন? এই ফাঁদ তৈরী করে আসলে দেশকে বিভক্ত করে আসলে কি উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছে ষড়যন্ত্রকারী তা সকলকে ই ভেবে দেখতে হবে।
[ এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া, কলাম লেখক, রাজনীতিক কর্মী ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক]
মন্তব্য করুন