এফ এ শাহেদ

প্রকাশিত: ৩১ জুলাই, ২০২৪, ০৫:৫৪ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

‘মার্চ ফর জাস্টিস’

আবারও বিক্ষোভে উত্তাল দেশ

ছবি: সংগৃহীত

কোটা সংস্কার আন্দোলনের অংশ হিসেবে ৯ দফা দাবি আদায় এবং সারাদেশে ছাত্র-জনতার ওপর গণহত্যা, গণগ্রেফতার, হামলা, মামলা, গুম ও খুনের প্রতিবাদে  ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে আবারও বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে দেশ। ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ এবং ধরপাকড়ের তথ্য পাওয়া গেছে। ময়মনসিংহে ছাত্রলীগ আন্দোলনকরীদের বাধা প্রদানের চেষ্টা করছে। বরিশাল, ঠাকুরগাঁও, চট্টগ্রাম, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ আন্দোলনকরীদের বাধা প্রদানসহ দফায় দফায় লাঠিপেটা করেছে। সিলেটে বিক্ষোভকারীরা ব্যারিকেড ভেঙে সামনে অগ্রসর হয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। সারাদেশে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, আইনজীবীসহ নানা শ্রেণী পেশার মানুষ আন্দোলনে সমর্থন দিয়ে কর্মসূচি পালন করেছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গতকাল বুধবার (৩১জুলাই) দুপুর সোয়া ১টার দিকে জড়ো হয়ে হাইকোর্টের দিকে মিছিল নিয়ে যাত্রা শুরু করেন। আন্দোলনকরীরা শিশু একাডেমির সামনে গেলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এক পর্যায়ে, পুলিশের সাথে তাদের ধস্তাধস্তি হয় । সেখান থেকে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় বলে অভিযোগ করেন বিক্ষোভকারীরা। পুলিশের বাধার পর মিছিল নিয়ে দোয়েল চত্বরে অবস্থান নেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ (ঢাবি) বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।  ‘মার্চ ফর জাস্টিস’কর্মসূচির সর্মথন দিয়ে, ঢাবির সাদা দলের শিক্ষকরা যুক্ত হন আন্দোলনে। একইসাথে হাইকোর্টের ভেতরে আইনজীবীদের একটি দলও মিছিলে অংশ নেন। 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা কর্মসূচিকে সমর্থন জানিয়ে পুরান ঢাকার নিম্ন আদালত এলাকায় বিক্ষোভ করেছেন আইনজীবীরা। বুধবার বেলা ১টার আইনজীবীদের একটি দল ঢাকা আইনজীবী সমিতির সামনে থেকে বিক্ষোভ  করে। বিক্ষোভ মিছিলটি চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সামনে কিছুক্ষণ অবস্থান করে আবার ঢাকা আইনজীবী সমিতির দিকে চলে যায়। এ সময় ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ সমর্থনে বিভিন্ন স্লোগান দেন তারা।

কর্মসূচির সমর্থনে বিক্ষোভ করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা। সুপ্রিম কোর্ট বার ভবনের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন তারা। মিছিল থেকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পক্ষে বিভিন্ন স্লোগান দেন। মিছিলটি হাই কোর্টের মাজারগেটে গেলে ফটক আটকে দেয় পুলিশ। আইনজীবীরা ফটক অতিক্রম করতে চাইলেও পুলিশের বাধার কারণে পারেননি। পরে গেটের কাছে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন তারা।

কর্মসূচি পালনের গতকাল (বুধবার) সিলেটে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সিলেট প্রতিনিধি জানান, বিক্ষোভকারীরা নগরের সুবিদ বাজারের দিকে গেলে পুলিশ বাধা দেয়। বিক্ষোভকারীরা ব্যারিকেড ভেঙে সামনে এগোলে পুলিশ তাদের লক্ষ্য করে টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে  ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পুলিশ নগরের বিভিন্ন অলিগলিতে গিয়ে তারা জড়ো হওয়া বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিচ্ছেন বলেও জানান। এর আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী সকাল ১১টা থেকে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) প্রধান ফটকে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভকারী শুরু করেন। 


বরিশালে কর্মসূচিতে দুই দফায় বেধড়ক লাঠিপেটা করেছে পুলিশ। পুলিশের হামলায় সাংবাদিকসহ অন্তত ২২ জন আহত হয়েছে তথ্য পাওয়া যায়। এ সময়ে বাম সংগঠনের নেতাসহ অন্তত ২০ জনকে আটক করে পুলিশ। বেলা ১১টার দিকে প্রথমে নগরীর রোডের অশ্বিনীকুমার হলের সামনে ও পরে সাড়ে দুপুর ১২টার দিকে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সামনে ফজলুল হক এভিনিউতে লাঠিচার্জ করে পুলিশ।
আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করেন, শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ হত্যার প্রতিবাদে আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে কয়েকশ পুলিশ, বিজিবি একসঙ্গে লাঠিপেটা শুরু করে। আমরা বলেছি আমরা সড়কের পাশে কর্মসূচি পালন করব। আমাদের কর্মসূচিতে কোনো সহিংসতা নেই। কিন্তু পুলিশ আমাদের ওপর সহিংসভাবে লাঠিপেটা শুরু করে। 

সারা দেশের ন্যায় ঠাকুরগাঁওয়ে মার্চ ফর জাস্টিস কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। বেলা ১১টায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা অপরাজেয় একাত্তরে এসে জড়ো হন। এর পর একটি মিছিল নিয়ে ঠাকুরগাঁও জেলা জজ আদালত চত্বর অভিমুখে যাত্রা শুরু করেন। এ সময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের মিছিলটি ঠাকুরগাঁও পৌরসভা গেটের সামনে এলে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা পুলিশি ব্যারিকেড ভেঙে ঠাকুরগাঁও জেলা জজ আদালতে যাত্রা শুরু করলে পুলিশ সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় পুলিশের লাঠিচার্জে কমপক্ষে দুইজন ছাত্র আহত হন।

নোয়াখালী জেলা শহর মাইজদীতে ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ পদযাত্রা করেছেন হাজারো শিক্ষার্থী।  বুধবার দুপুর ১২টার দিকে তাঁরা শহরের মাজইদী বাজার এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন। পরে মিছিলটি জেলা জজ আদালত-সংলগ্ন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশে মিলিত হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ওই কর্মসূচি পালন করা হয়। বিক্ষোভ মিছিল চলাকালে পুলিশ থাকলেও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

ময়মনসিংহে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি পুলিশ বেষ্টনীতে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার বেলা ১১টায় কর্মসূচি শুরু হয়। সমাবেশস্থলে ছাত্রলীগের বাধা এবং রাস্তার দুই পাশে ছাত্রলীগের কর্মীরা অবস্থান নেয়ায় অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশ বেষ্টনী দিয়ে রাখে শিক্ষার্থীদের। বেলা ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনের সড়ক দিয়ে ছাত্রলীগের কিছুসংখ্যক নেতা-কর্মী আন্দোলনকরীদের দিকে আসতে শুরু করেন। জয়নুল আবেদিন উদ্যান সড়কে অবস্থান নেন ছাত্রলীগের আরেকটি অংশ। এতে মাঝখানে পড়ে যান বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা। ওই অবস্থায় পুলিশ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের চারদিকে বেষ্টনী তৈরি করে তাঁদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে।


সারাদেশে ছাত্র-জনতার ওপর গণহত্যা, গণগ্রেফতার, হামলা, মামলা, গুম ও খুনের প্রতিবাদে কর্মসূচি ঘিরে চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে বিপুল পরিমাণ পুলিশ মোতায়েন করা হয়। তবে পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে আদালত চত্বরে অবস্থান নেন বিক্ষোভকারীরা। বুধবার (৩১ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টায় অন্তত ২০০ বিক্ষোভকারী সেখানে অবস্থান নেন। আদালত প্রাঙ্গণে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। সকাল থেকেই এই এলাকা দিয়ে যারাই যান, তাদের তল্লাশি করা হয়। অনেকের মোবাইল ফোনও চেক করে পুলিশ। 


খুলনায় কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। বুধবার (৩১ জুলাই) দুপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি পালন করতে বুধবার সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সড়কে জড়ো হতে শুরু করেন। তারা নগরীর শিববাড়ী, রয়েল মোড়, সাত রাস্তা মোড়, ময়লাপোতা মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দেন। এ সময় খুলনা মহানগরীর বিভিন্ন সড়ক অবরোধে গেলে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় সেখান থেকে পুলিশ কয়েকজনকে আটক করে।


প্রসঙ্গত ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচির বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদ মঙ্গলবার রাতে জানান, বুধবার দুপুর ১২টায় দেশের সব আদালত চত্বর, ক্যাম্পাসে ও রাজপথে এ পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করা হবে। ৯ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে এ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে দেশের সব আদালত, ক্যাম্পাস এবং রাজপথে। 

 

আরবি/এস 

মন্তব্য করুন