প্রকাশিত: ৩ আগষ্ট, ২০২৫, ১১:৫১ এ এম

অনলাইন সংস্করণ

অভয়নগরে  ব্যবসায়ীকে জিম্মি করে  বালুতে পুঁতে ও অস্ত্রের মুখে’ চার কোটি টাকা চাঁদা আদায়ের অভিযোগ

 

 আনোয়ার হোসেন:

যশোরের অভয়নগরে এক ব্যবসায়ীকে জিম্মি করে ‘বুক সমান বালুতে পুঁতে ও অস্ত্রের মুখে’ দুই দফায় চার কোটি টাকা চাঁদা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে ঘটনার প্রায় সাড়ে ১০ মাস পর; যাতে নাম এসেছে এক বিএনপি নেতা ও সাংবাদিকের।

গতকাল শনিবার ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীর স্ত্রী আসমা খাতুন ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরের ওই ঘটনায় অভয়নগর থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন বলে জানান অভয়নগর থানার ওসি আব্দুল আলিম। এরপর বিষয়টি সংবাদ মাধ্যমে আসে।

ওসি বলেন, দুই দফা আটকে রেখে চার কোটি টাকা চাঁদা আদায়ের অভিযোগ এনেছেন আসমা খাতুন। ঘটনাটি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

  অভয়নগর থানা ওসি বলেন, দুই দফায় আটক রেখে চার কোটি টাকা চাঁদা আদায়ের অভিযোগ এনেছেন আসমা খাতুন। ঘটনাটি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

গত দুদিন আগে বৃহস্পতিবার ওই ব্যবসায়ীর স্ত্রী অভয়নগরের রাজ ঘাট সেনা ক্যাম্পে লিখিত অভিযোগ করেছেন।

উভয় অভিযোগে পদ স্থগিত হওয়া অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়া পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান জনি এবং নওয়াপাড়া প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মফিজ উদ্দিন সহ তাদের সহযোগী সৈকত হোসেন হিরা ও সম্রাট হোসেনের নাম দেওয়া হয়েছে।

ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী শাহনেওয়াজ কবীর টিপু (৪৮) নওয়াপাড়ার ‘জাফ্রিদী এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী’। তিনি অভয়নগর উপজেলার চলশিয়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি নাবিল গ্রুপ এর গম সরবরাহের কাজ করতেন।এই ঘটনার পর থেকে টিপু এলাকা ছেড়েছেন।

টিপুর স্ত্রী আসমা বলেন, “বিএনপি নেতা জনি ও সাংবাদিক মফিজের নেতৃত্বে আমার স্বামীকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে চার কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। আমার স্বামী ভয়ে এলাকা ছেড়েছেন। সন্তানদের নিয়ে চরম নিরাপত্তাহীনতায় আমি আছি। ব্যবসা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। এ ঘটনার সুষ্ঠ বিচার চাই আমি।

টিপুর স্ত্রী আসমা খাতুনের অভিযোগ, ২০২৪ সলের ২রা সেপ্টেম্বর সকাল ১০টার দিকে টিপুকে সু কৌশলে বিএনপি নেতা আসাদুজ্জামান জনির অফিসে ডেকে নিয়ে যান হিরা নামের এক ব্যক্তি। সেখানেই টিপুকে মারধর এবং অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে দুই কোটি টাকা দাবি করা হয়। খবর পেয়ে টিপুর স্ত্রী সাউথবাংলা ব্যাংক থেকে বিএনপি নেতা জনির প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবের নম্বরে দুই কোটি টাকা পাঠিয়ে দেন। টাকা পেয়ে তারা টিপুকে ছেড়ে দেয়।

অভিযোগে আসমা বলেন, “আগের ঘটনার ১৬ দিন পর গত  ১৮ই সেপ্টেম্বর সকাল ৯টার দিকে টিপু গ্রামের বাড়ি উপজেলার চলিশিয়া থেকে মোটরসাইকেলে করে বাজারে যাচ্ছিলেন। পথে অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গেইট পার হওয়ার সময় তার গতিরোধ করেন হিরা। ওই দিন বেলা ৩টা পর্যন্ত টিপুর মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

স্বজনরা জানতে পারেন, টিপুকে বিএনপি নেতা জনির ‘কনা ইকোপার্কে’ নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে টিপুর স্ত্রী গেলে জনি, সম্রাট হোসেন ও সাংবাদিক মফিজ উদ্দিন আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে টিপুকে মারধর করে। এরপর টিপুর বুক পর্যন্ত গর্ত খুঁড়ে তাকে বালু চাপা দিয়ে আরও দুই কোটি টাকা দাবি করেন তারা। নির্যাতন সইতে না পেরে টিপু তার ম্যানেজার কে ফোন করে টাকা দিতে বলেন।

পরে ম্যানেজার সাংবাদিক মফিজের হিসাব নম্বরে পূবালী ব্যাংক থেকে ৬৮ লাখ এবং সাউথবাংলা ব্যাংক থেকে ৩২ লাখ টাকা পাঠিয়ে দেন। সেই সময় টিপুর কাছ থেকে আরও এক কোটি টাকার চেক আদায় করেন মফিজ। এছাড়া ছয়টি ১০০ টাকার ফাঁকা স্টাম্পে টিপুর স্বাক্ষর নেওয়া হয়। এসব ঘটনা কাউকে বললে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে টিপুকে ছেড়ে দেন তারা।

অভিযোগের বিষয় বক্তব্য জানতে বিএনপি নেতা আসাদুজ্জামান জনি ও সাংবাদিক মফিজ উদ্দিনের মোবাইলে ফোন করা করা হলে সেগুলো বন্ধ পাওয়া যায়। বাকি দুজনের বিষয়ে কোনো খোঁজখবর পাওয়া যায়নি।

এই বিষয়ে যশোর জেলা বিএনপির সভাপতি সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু বলেন, সংগঠন বিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে জনির বিরুদ্ধে আগেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তিনি এখন আমাদের দলের কেউ না।

ব্যবসায়ীর কাছ থেকে টাকা আদায় সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, এই বিষয়ে কোনো তথ্য জানা নেই। তবে তার কর্মকাণ্ডের দায়ভার দল নেবে না।

মন্তব্য করুন