মেহ্দী আজাদ মাসুম

প্রকাশিত: ১৫ জুন, ২০২৪, ০৯:০১ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা

আজিজুল কেন বারবার অধরা

আজিজুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

এতো অঘটনের নায়ক হওয়া সত্ত্বেও জেলা প্রাণীসম্পাদ কর্মকর্তা কেনো বারবার থেকে যান অধরা, কেনো ঠেকে থাকে না পদোন্নতি-পদায়ন-প্রশ্নটি এখন সামনে চলে আসছে। কারণ, তার অতীত যেমন কুয়াশাচ্ছন্ন, বর্তমানও তেমন কদর্য। ১৩ জুন তিনি যে কান্ডটি ঘটালেন, একজন জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তার জন্য তা মোটেই শোভন নয়। তিনি সেদিন খোদ প্রাণীসম্পদ মন্ত্রীর বাসার লিফটে অধিদফতরের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে শারিরীকভাবে লাঞ্ছিত করে ঔদ্ধত্যের চরম পরাকাষ্ঠা দেখান-যা প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলার মারাত্মক বরখেলাপ। এ ঘটনায় শাহবাগ থানায় প্রথমে এজাহার, পরে তা হত্যা চেষ্টা মামলায় রূপান্তরিত হয়। এরপর থেকে তিনি পলাতক, পুলিশ তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চালাচ্ছে।

এদিকে প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয় তড়িঘড়ি তার পদায়ন বাতিল করে। এটা কি শাস্তি হলো?-প্রশ্নটি ঘুরে ফিরে দেখা দিচ্ছে। প্রশ্ন উঠেছে, একজন ফৌজদারী মামলার অভিযুক্ত ব্যক্তিকে সাসপেন্ডের পরিবর্তে কেনো পদায়ন বাতিলের মতো দায়সারা গোছের ব্যবস্থা নেওয়া হলো! কিভাবেই বা তিনি বারবার পদোন্নতি পান, পদায়িত হন-এমন প্রশ্নও অনেককেই করতে শোনা যাচ্ছে।

আজিজুল ইসলাম জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (লিভ, ডেপুটেশন অ্যান্ড ট্রেনিং রিজার্ভ)। তার পদটি পঞ্চম গ্রেডের জুনিয়র কর্মকর্তা পদমর্যাদার। এর আগে দুটি বিভাগীয় মামলায় তার দুটি ইনক্রিমেন্ট (বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি) কর্তন হলে আজিজুল এই পদে চলে যান। অন্যদিকে প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তার পদ ছিল পরিচালক পদমর্যাদার তৃতীয় গ্রেডের।

আজিজুলের কাহিনী এখানেই শেষ নয়। ২০২৩ সালের ১২ অক্টোবর বহিরাগত এক ব্যক্তিকে নিয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তৎকালীন মহাপরিচালক এমদাদুল হক তালুকদারের ওপর চড়াও হওয়ার মতো দুঃসাহসও দেখান আজিজুল। তখন তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ওই দিন মহাপরিচালক তৎকালীন পরিচালকের (প্রশাসন) কক্ষে যান। আজিজুল তখন তার বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহারের আবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে মহাপরিচালককে চাপ দেন। মহাপরিচালক তাকে বলেন, এটি প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের বিষয়। তখন তার সঙ্গে চেঁচামেচি করেন আজিজুল। পরে কক্ষ ত্যাগ করতে চাইলে মহাপরিচালকের পথরোধ করেন। একপর্যায়ে তাকে শারিরীকভাবে লাঞ্ছিত করেন। এঘটনায় বিভাগীয় মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলে এক বছরের জন্য বেতন গ্রেডের নিম্নতর ধাপে অবনমিত করা হয় তাকে।

শুধু তাই নয়। অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে লাঞ্ছিত করার এ ঘটনার আগের বছর (২০২২ সালের ৩০ ডিসেম্বর) প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে আজিজুল ইসলামের বিরুদ্ধে অশোভন, অসৌজন্যমূলক ও বিদ্বেষপ্রসূত বার্তা আদান-প্রদান করার অভিযোগ আনা হয়। এ ঘটনায়ও দোষী সাব্যস্ত হলে গত ১২ মে তাকে বেতন গ্রেডের নিম্নতর ধাপে অবনমিত করা হয়। একই সঙ্গে তার সাময়িক বরখাস্ত প্রত্যাহার করা হয়।

এভাবেই পদানত, পদোন্নতি এবং পদায়নের খেলা হয়েছে তাকে ঘিরে। কিন্তু পদচ্যুত হন না। পর্যবেক্ষক মহলের প্রশ্ন, ফৌজদারী মামলায় জড়ানোর পর আজিজুলকে এবার কি করা হবে?

 

মন্তব্য করুন