প্রকাশিত: ১১ ঘন্টা আগে, ০৪:১৩ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

সমন্বয়কের আড়ালে ভয়ঙ্কর চাঁদাবাজ রিয়াদ এলাকায় চাঞ্চল্য

 

মোঃ ইব্রাহিম প্রতিনিধি সেনবাগ নোয়াখালী :

সমন্বয়কের আড়ালে ভয়ঙ্কর চাঁদাবাজ বনে যাওয়া আব্দুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান রিয়াদের নানা অপকর্মের কাহিনী বের হয়ে আসছে। ৫ই আগষ্টের পর মাত্র কয়েক মাসেই সে কামিয়েছে কাড়ি কাড়ি টাকা। এ নিয়ে তার নোয়াখালীর জেলার সেনবাগের গ্রামের এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজধানী ঢাকার গুলশানে গত শনিবার সন্ধ্যায় পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্যের কাছে চাঁদাবাজির সময় চারজনের সঙ্গে হাতেনাতে আটক হন ‘ছাত্রলীগ নেতা থেকে সমন্বয়ক’ বনে যাওয়া আব্দুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান রিয়াদ। পুলিশ তাকে গ্রেপ্তারের পর সংশ্লিষ্ট সংগঠনের পদ থেকে তাকে বহিষ্কারও করা হয়েছে। রিয়াদের চাঁদাবাজির ঘটনা প্রকাশ পেলে সারাদেশের ন্যায় তার নিজ জেলা নোয়াখালী সেনবাগে আলোচনা শুরু হয়। চাঁদাবাজির অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া রিয়াদের মূল বাড়ি নোয়াখালী জেলার সেনবাগ উপজেলার নবীপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের নবীপুর বাজারের দক্ষিণ পাশে। তার হঠাৎ এমন পরিবর্তনে বিস্মিত এলাকাবাসী।

স্থানীয় এলাকাবাসী জানায়, রিয়াদের দাদা ওয়ালীউল্যাহ ছিলেন রিকশাচালক। দাদার মতো তার বাবা আবু রায়হানও রিকশাচালক ছিলেন আট বছর আগে। তবে বেশ কিছুদিন ধরে কাজ করছেন দিনমজুর হিসেবে। দৈনিক দিনমজুরের কাজ থেকে যে টাকা কামাই হয় তার পাশাপাশি পরিবারের অন্য সদস্যদের দিনমজুরের কাজ করে পাওয়া টাকা দিয়েই সংসার চালাতেন আবু রায়হান।

বাবা কঠোর পরিশ্রম করে ছেলে রিয়াদকে পড়াশোনা করিয়েছেন। স্বপ্ন ছিল ছেলে একদিন বড় চাকরি করে সংসারের হাল ধরবেন। পরিবারের হাল ধরে বাবার দীর্ঘদিনের কষ্ট থেকে মুক্তি দিবেন।

রিয়াদের মা নাজমুন নাহার একজন গৃহিণী। তিনি একসময় সংসার চালাতে অন্যের বাড়িতে কাজ করতেন। দারিদ্র্য, অনটন লেগেই থাকত তাদের পরিবারে। দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সবার ছোট রিয়াদ। বড় ভাই চট্টগ্রাম একটি ফিশারিজ কোম্পানিতে চাকরি করেন।

রিয়াদের স্কুলের সহপাঠীরা জানায়, স্থানীয় নবীপুর হাই স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন রিয়াদ। পরে ভর্তি হন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সরকারি মুজিব মহাবিদ্যালয়ে। সেখানে গিয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। সাবেক সড়ক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জার হাতে ফুল দিয়ে ছাত্রলীগে যোগ দিয়েছিলেন। যুক্ত হন তার বাহিনীতে। পরে সেখান থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে ঢাকায় গিয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এক পর্যায়ে কোটা বিরোধী আন্দোলনে যোগ দেন। হয়ে ওঠেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা। ৫ আগস্ট স্বৈরাচার আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করে ধীরে ধীরে চাঁদাবাজিতে জড়িয়ে পড়েন।

রিয়াদের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পাল্টে গেছে আগের পরিবেশ। নেই আগের ভাঙাচোরা ঘরদোর। আগের ঘরের পাশে নির্মিত হচ্ছে পাকা ঘর। পাকা ঘর নির্মাণ করার পাশাপাশি রিয়াদ কিনেছেন দামি গাড়িও।

সমন্বয়ক পরিচয়ে চাঁদাবাজি করছে ছেলে রিয়াদ, মা-বাবা তা কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছেন না। রিয়াদের মা সামসুন্নাহার বলেন, ‘আমরা না খেয়ে ওকে শহরে পাঠাইছি। ছেলেটা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ত, ভালোই ছিল। টিভিতে দেখি আমার ছেলেকে পুলিশে ধরেছে। শুনেছি সে নাকি চাঁদাবাজি করেছে। এটা আমারা বিশ্বাস করিনা। আমার ছেলেকে কেউ ষড়যন্ত্র করে চাঁদাবাজ বানিয়েছে। ’

রিয়াদের এক প্রতিবেশী জানান, ‘রিকশা চালানোর মাধ্যমে যে পরিবার চলত, দিন এনে দিন খেতে হতো। সেখানে ৫ আগস্টের পর রিয়াদের বিলাসী জীবনযাপন, ছাদ ঢালাই করে পাকা বাড়ি নির্মাণ করা দেখে আমরা অবাক হয়েছি।’

খোঁজ নিয়ে আরো জানা যায়, রিয়াদ ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক। গত জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর সমন্বয়ক পরিচয়ে হয়ে ওঠেন চাঁদাবাজ। সমন্বয়কের মুখোশ পরে কিভাবে গ্রামের এক হতদরিদ্র রিকশাওয়ালা পরিবারের ছেলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন এবং বিলাসী জীবন যাপন করে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন গ্রামবাসী। যদিও তার ভয়ে এতদিন কেউ মুখ খোলার সাহস পায়নি।

নবীপুর হাই স্কুল পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি শিহাব উদ্দিন বলেন, ‘আমার স্কুলের এই ছাত্রকে সবাই দান-খয়রাত করে পড়াত, কারণ তার দরিদ্র রিকশাচালক বাবার পক্ষে পড়ালেখার খরচ বহন করা সম্ভব হতো না। সে কিভাবে এত ভয়ংকর চাঁদাবাজ হয়ে উঠল তা বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়।’

সাধারণ পরিবার থেকে শহরে উঠে আসা সমন্বয়ক পরিচয়ে চাঁদাবাজি করে অঢেল সম্পত্তির মালিক বনে যাওয়া এমন আরও রিয়াদ সমাজের আড়ালে লুকিয়ে আছে কি না প্রশাসনকে তা খুঁজে বের করে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে স্থানীয়রা।

চাঁদাবাজির সময় হাতেনাতে আটক রিয়াদের ছবির ফ্রেমে আছেন কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতা। ফেসবুকে রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে ছবি পোস্ট করে নিজের শক্তির জানান দিতেন তিনি। তার ছবির ফ্রেমে বাদ যাননি বর্তমান সরকারের উপদেষ্টারাও। একাধিক উপদেষ্টার সঙ্গে ছবি পাওয়া গেছে তার ফেসবুক পোষ্টে।

মন্তব্য করুন