
প্রকাশিত: ১০ ঘন্টা আগে, ০৫:১০ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
মোঃ একরামুল হক, হাটহাজারী (চট্টগ্রাম)সংবাদদাতাঃ
বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো টাইফয়েড প্রতিরোধে জাতীয় পর্যায়ে টিকাদান কর্মসূচি চালু হতে যাচ্ছে। আগামী ১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ থেকে সারাদেশে ৯ মাস থেকে ১৫ বছর বয়সী শিশুদের টাইফয়েড কনজুগেট ভ্যাকসিন (Typhoid Conjugate Vaccine - TCV) দেওয়া হবে। এটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) স্বীকৃত একটি নিরাপদ ও দীর্ঘমেয়াদি সুরক্ষাদানকারী টিকা, যা টাইফয়েড জ্বর প্রতিরোধে কার্যকরভাবে প্রমাণিত। সরকারের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (EPI) আওতায় শিশু শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের এই টিকা দেওয়া হবে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে।
টাইফয়েড জ্বর এখনও বিশ্বের অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ সংক্রামক ব্যাধি। ২০১৯ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতিবছর প্রায় ৯০ লক্ষ মানুষ টাইফয়েডে আক্রান্ত হন এবং এর মধ্যে প্রায় ১ লক্ষ ১০ হাজার মৃত্যুবরণ করেন। সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ঘটে দক্ষিণ এশিয়া ও সাব-সাহারান আফ্রিকা অঞ্চলে। অপরিষ্কার পানি, খোলা জায়গায় মলত্যাগ, অস্বাস্থ্যকর খাবার ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার অভাব এই রোগের প্রধান কারণ। বর্তমানে বিশ্বে ৪১৯ মিলিয়নের বেশি মানুষ খোলা জায়গায় মলত্যাগ করে, আর ১০% মানুষ এখনও অপরিশোধিত পানি দিয়ে তৈরি খাবার গ্রহণ করছে।
এই ভ্যাকসিন কার্যক্রমে অংশ নিতে হলে প্রতিটি শিশুর ১৭ ডিজিটের ডিজিটাল জন্মনিবন্ধন সনদ আবশ্যক। যাদের এখনও জন্মনিবন্ধন হয়নি, তাদের দ্রুত স্থানীয় ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার বা অনলাইনে জন্মনিবন্ধন সম্পন্ন করতে বলা হয়েছে। রেজিস্ট্রেশনের জন্য নির্ধারিত ওয়েবসাইট www.vaxepi.gov.bd-এ গিয়ে সহজেই নিবন্ধন ও টাইফয়েড টিকার জন্য আবেদন করা যাবে। যারা পূর্বে জরায়ুমুখ ক্যান্সারের HPV টিকার জন্য নিবন্ধন করেছিলেন, তারা পুনরায় নিবন্ধনের প্রয়োজন না করে সরাসরি টাইফয়েড টিকার জন্য রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন।
টাইফয়েড প্রতিরোধে ভ্যাকসিন যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি নিরাপদ পানি, স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ও পরিচ্ছন্ন খাদ্যাভ্যাস নিশ্চিত করাও জরুরি। সরকারের এই উদ্যোগ যেন সফল হয়, সে জন্য প্রয়োজন গণসচেতনতা ও অভিভাবকদের সক্রিয় অংশগ্রহণ। এখনই সময়, আপনার শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার।
টাইফয়েড রোগটি Salmonella Typhi নামক ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে হয়ে থাকে। এটি প্রধানত দূষিত পানি, খাবার এবং অপরিচ্ছন্ন পরিবেশের মাধ্যমে ছড়ায়। রোগটি একজন থেকে আরেকজনে ছড়াতে পারে, বিশেষত রোগীর পায়খানা বা বমি থেকে দূষণ ছড়ালে। স্যানিটেশন ব্যবস্থা দুর্বল হলে এই রোগের প্রকোপ বাড়ে।
রোগের লক্ষণসমূহ:
১. দীর্ঘস্থায়ী উচ্চ জ্বর
২. মাথাব্যথা ও শরীরে দুর্বলতা
৩. পেট ব্যথা ও হজমের সমস্যা
৪. বমি বমি ভাব, অরুচি
৫. পাতলা পায়খানা বা কোষ্ঠকাঠিন্য
৬. লালচে ফুসকুড়ি (রোজ স্পট)
টাইফয়েড রোগের চিকিৎসা যথাসময়ে না করলে জটিলতা দেখা দিতে পারে। তাই রোগ শনাক্ত হলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে রোগ নিশ্চিত করে উপযুক্ত এন্টিবায়োটিক দেওয়া হয়। এ সময় বিশ্রাম ও পর্যাপ্ত তরল খাবার যেমন ওআরএস, ভাতের মাড়, ফলের রস ইত্যাদি খাওয়া প্রয়োজন। চিকিৎসার কোর্স শেষ না করলে রোগ আবার ফিরে আসতে পারে।
প্রতিরোধের উপায়:
১. বিশুদ্ধ পানি পান করা
২. নিয়মিত হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা
৩. বাইরের খাবার না খাওয়া
৪. খাবার ঢেকে রাখা ও পরিষ্কার পরিবেশে প্রস্তুত করা
৫. টিকা গ্রহণ (Typhoid Vaccine)
৬. ব্যক্তিগত ও পারিপার্শ্বিক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা
টাইফয়েড একটি সচেতনতা-নির্ভর রোগ। প্রতিরোধই এর প্রধান প্রতিকার। সুস্থ ও সচেতন জীবনযাপনের মাধ্যমে এই রোগ থেকে সহজেই রক্ষা পাওয়া সম্ভব। তাই আমাদের উচিত নিজে সতর্ক থাকা ও অন্যকে সচেতন করা।
মন্তব্য করুন