
প্রকাশিত: ২১ ঘন্টা আগে, ০৭:২০ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
মোঃ একরামুল হক, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম:
চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার নাঙ্গলমোড়া বাজারসংলগ্ন হালদা নদীর ওপর নির্মিত পুরনো বাঁশের সাঁকোটি হঠাৎ ভেঙে পড়ায় তিনটি উপজেলার অন্তত ১৭টি গ্রামের হাজারো মানুষ চরম যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতায় পড়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত সাঁকোটি ছিল এলাকাবাসীর একমাত্র যাতায়াতের মাধ্যম। এখন সেটি ভেঙে যাওয়ায় পুরো অঞ্চলের শিক্ষার্থী, কৃষক, দিনমজুর ও রোগীদের জীবনযাত্রায় নেমে এসেছে অচলাবস্থা।
ভেঙে পড়া সাঁকোটি দিয়ে প্রতিদিন হাটহাজারীর নাঙ্গলমোড়া, রাউজানের ফকিরছড়ি ও চিকদাইর, এবং ফটিকছড়ির দক্ষিণ ঢেমশা ও চন্দ্রঘোনাসহ আশপাশের গ্রামের মানুষ যাতায়াত করতেন। এই একটি সাঁকোই ছিল বাজার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্যসেবা ও সামাজিক যোগাযোগের মূল পথ। বিকল্প কোনো সেতু বা নিরাপদ পারাপারের ব্যবস্থা না থাকায় এখন অনেকেই বাধ্য হয়ে ছোট নৌকা বা ডিঙ্গি ব্যবহার করছেন, যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
সাঁকোর ভাঙনে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে বিদ্যালয়গামী শিক্ষার্থীরা। নাঙ্গলমোড়া উচ্চ বিদ্যালয়, ইসলামিয়া মাদ্রাসা, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ পার্শ্ববর্তী রাউজান ও ফটিকছড়ির বেশ কয়েকটি স্কুলের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা প্রতিদিন সাঁকোটি ব্যবহার করতেন। এখন অনেকে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে, কেউ কেউ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্রোতভরা নদী পাড়ি দিচ্ছে।
রোগীদের যাতায়াতে নেমেছে আরেক দুর্ভোগ। জরুরি চিকিৎসাসেবা গ্রহণে সময়মতো নদী পার হতে না পারায় সংকট আরও জটিল আকার নিচ্ছে। প্রবল স্রোতের মধ্যে নৌকাযোগে পারাপারে নৌকা উল্টে যাওয়ার ঘটনাও ঘটছে মাঝেমধ্যে।
এই বাঁশের সাঁকোটি স্থানীয়ভাবে নির্মিত হয়েছিল প্রায় পাঁচ দশক আগে। এলাকার মানুষ প্রতিবছর নিজেরাই এটি মেরামত করে যাতায়াত চালু রাখতেন। কিন্তু বারবার ভেঙে পড়া ও পুরনো কাঠামোর কারণে এখন এটি সম্পূর্ণরূপে ব্যবহার অযোগ্য হয়ে গেছে।
সাঁকোটি ছিল শুধু একটি কাঠামো নয়—এটি ছিল তিন উপজেলার সংযোগকারী কৌশলগত পথ। কৃষিপণ্য বাজারজাতকরণ, শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি, চিকিৎসা সেবা গ্রহণ, এমনকি সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ—সবই এই সাঁকোর ওপর নির্ভরশীল ছিল।
বারবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হলেও এখনো পর্যন্ত কোনো স্থায়ী সেতু নির্মাণের পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির পরও শুধুই আশ্বাস মিলেছে—বাস্তব অগ্রগতি শূন্য। এখন তারা চাইছেন একটি টেকসই ও স্থায়ী সেতু নির্মাণ, যাতে বর্ষায় বা দুর্যোগে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন না হয়।
বিশিষ্ট লেখক ও সমাজ চিন্তক জনাব টিপু সুলতান বলেন সাঁকোটি ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদী পার হচ্ছে ছাত্র ছাত্রী যে কোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা হতে পারে।
স্থানীয় নাঙ্গল মোড়া বাজারের সওদাগর জনাব নুরুল ইসলাম জানান আমার সামনেই প্রতিদিন রশি টানা ডিঙি নৌকায় ঝুঁকি নিয়ে নদী পার হতে
মানুষের কষ্টের সীমা নেই।
হাটহাজারী উপজেলায় স্থানীয় সরকার উপজেলা ইন্জিনিয়ার জয়শ্রী দে এর নিকট সাঁকোটির বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন পত্র-পত্রিকায় বাঁশের সাঁকোটি ভেঙেে যাওয়ার খবর জানতে পেরেছি এটি একটি বড় প্রজেক্ট আপাতত আমাদের কিছু করার নেই।
একটি সাঁকোর ভাঙন যে কীভাবে একটি অঞ্চলের শিক্ষা, অর্থনীতি, স্বাস্থ্য ও জনজীবনকে স্তব্ধ করে দিতে পারে, তার বাস্তব উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে নাঙ্গলমোড়া ও আশপাশের অঞ্চল। সময়মতো উদ্যোগ না নিলে ভোগান্তি আরও বাড়বে বলে মনে করছেন ভুক্তভোগীরা।
মন্তব্য করুন