
প্রকাশিত: ২৫ মার্চ, ২০২৫, ০২:২৫ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
আবু রায়হান মিসবাহ
[কবি -লেখক, সম্পাদক, দৈনিক গণমাধ্যম এবং
সভাপতি প্রার্থী, শ্রীপুর উপজেলা জাতীয় নাগরিক পার্টি ]
রাজনীতি হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে কিছু ব্যক্তির সমন্বয়ে গঠিত কোন গোষ্ঠী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। যদত নাগরিক সরকারের রাজনীতিকেই বোঝানো হয়, তবে অন্যান্য অনেক সামাজিক প্রতিষ্ঠান, যেমন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান যেখান মানুষের মধ্যে পারস্পারিক সম্পর্ক বিদ্যমান, সেখানে রাজনীতি চর্চা করা হয়। রাজনীতি কর্তৃত্ব ও ক্ষমতার ভিত্তিতে গঠিত সামাজিক সম্পর্ক নিয়ে গঠিত।
১৯৭১ সালে প্রতিষ্ঠিত এই দেশটির জন্মের ইতিহাস, বিদ্যমান সরকার ব্যবস্থা, আন্তর্জাতিক প্রভাব এবং মানুষের রাজনীতিমনস্কতা কেন্দ্র করে আবর্তিত। বাংলাদেশের সরকার ব্যবস্থা সংসদীয় পদ্ধতির। এই পদ্ধতিতে প্রধানমন্ত্রীর হাতে সরকারের প্রধান ক্ষমতা ন্যস্ত থাকে। বহুদলীয় গণতন্ত্র পদ্ধতিতে এখানে জনগণের সরাসরি ভোটে জাতীয় সংসদের সদস্যরা নির্বাচিত হন। নির্বাহী ক্ষমতা সরকারের হাতে ন্যস্ত। আইন প্রণয়ন করা হয জাতীয় সংসদে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে সামরিক বাহিনীর অংশগ্রহণের সুযোগ না থাকলেও বিভিন্ন সময়ে সেনা শাসন এবং সেনা প্রভাব বাংলাদেশের রাজনীতির গতিপথ নিয়ন্ত্রণ করেছে। ইসলামী শক্তি এবং জঙ্গীবাদী শক্তীর উত্থান কখনো কখনো বাংলাদেশের রাজনীতিকে প্রভাবান্বিত করেছে। রাজনীতির লক্ষ্য গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা এবং জনকল্যাণ। সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার রাজনীতিতে তাদের সরাসরি অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের মানুষ তেমন রাজনীতি সচেতন না। আওয়ামী লীগ-বিএনপি সংঘর্ষ একটা সময় তিক্ত আকার ধারণ করেছিল এবং প্রতিনিয়ত আন্দোলন, সহিংসতা এবং হত্যাকাণ্ডের জন্ম দেয়। অন্যদিকে বাংলাদেশের রাজনীতিবিদরা দুর্নীতিপরায়ণ হওয়ার কারণে সাধারণ মানুষও বেশ হতাশ ছিল। আশার কথা এখন মানুষ পরিবর্তন চায়। মানুষের প্রত্যাশাও তরুণদের নেতৃত্বে গঠিত নতুন রাজনৈতিক দলটির কাছে অনেক।
গণতন্ত্রের মূলভিত্তি জনগণ। যেখানে জনগণের উপস্থিতি নেই, সেখানে কোনোদিন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারে না। বিরোধী দল বা শাসক দলের আস্থা বৃদ্ধির একমাত্র হাতিয়ার জনগণ। জনগণের উপর আস্থা থাকলে বিরোধী দলের আন্দোলন কিংবা শাসক দলের শাসন সবসময় গণমুখী হয়। কিন্তু গণতন্ত্রে জনগণের ঘাটতি মানেই রাজনীতিতে মূল্যবোধের অবক্ষয়। দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত না হলে কোনো উন্নয়ন হবে না। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে সরকারি দলের পাশাপাশি বিরোধী দলকেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। দু’দলকেই দায়িত্বশীল হতে হবে। বিরোধী দল শব্দটি একটি গণতান্ত্রিক শব্দ। আমাদের দেশের মত সংসদীয় গণতান্ত্রিক দেশে এই শব্দটির সাথে আমরা খুবই পরিচিত। একটি গণতান্ত্রিক দেশে বিরোধী দলের ভূমিকা আয়না স্বরূপ। সরকার যখন কোন ক্ষেত্রে লাইনচ্যুত হয় বিরোধী দল চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। দূরদর্শী সরকার হলে এ থেকে শিক্ষা নিয়ে সঠিক পথে চলার চেষ্টা করে এটাই বাস্তবতা এবং একটি আদর্শবাদী সরকারের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
সরকারের অগণতান্ত্রিক, জনগণ ও দেশের জন্য অকল্যাণকর কাজ ও সিদ্ধান্তের সমালোচনা ও সরকারকে পরামর্শ দেয়াই ও সরকারকে সহযোগিতা করাই হল বিরোধী দলের প্রধান দায়িত্ব। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে এর সংজ্ঞা সম্পূর্ণ ভিন্ন। যে দলই সরকারে থাকুক না কেন তাদের অন্যতম এজেন্ডা হয়ে ওঠে বিরোধী দলকে দমন করা। তাদের সাংবিধানিক, রাজনৈতিক অধিকারে হস্তক্ষেপ করা। জেল, জুলুম, অযৌক্তিক, রাজনৈতিক ও হয়রানিমূলক মামলা দ্বারা প্রতিহত করা হয় তাদের যৌক্তিক আন্দোলনকে।
আমরা যদি এই সঙ্কীর্ণতা থেকে নিজেদের মুক্ত করতে না পারি তাহলে নিজেদের উন্নয়ন কখনও সম্ভব নয়। কারণ একটি গণতান্ত্রিক দেশে বিরোধী দলের গুরুত্ব অপরিসীম। বিরোধী দল না থাকলে সরকারের কোনো ভুলই চোখে পড়ে না এবং কোন কাজ সমালোচনাহীনভাবে সুচারুরূপে শেষ হবে না। নয়ত বা, সরকার জনগণ হতে প্রায় সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে এবং একটি গণতান্ত্রিক দেশে জনগণ হতে বিচ্চিন্ন কোনো দলের পক্ষে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা আদৌ সম্ভব নয়।
গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত হচ্ছে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলো এখনও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হিসেবে বিকশিত হতে পারেনি। প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোতে দলীয় সিদ্ধান্ত ছাড়াই, কয়েকজনের সিদ্ধান্ত ও ইচ্ছা অন্ধভাবে সমর্থিত হয়। অন্ধ সমর্থন এবং সমর্থন বিষয়ক অন্ধতা দেশে গণতন্ত্রের বিকাশের পথকে রুদ্ধ করছে। রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতরে গণতন্ত্রের অনুশীলন নেই। দলের মধ্যে যারা আছেন তাদের ভিন্নমতই যেখানে গ্রহণযোগ্য নয় সেখানে দলের বাহির থেকে যেসব উপদেশ ও সমালোচনা করা হয় তা গ্রহণযোগ্য হবে কি করে? কিভাবে রাষ্ট্র পরিচালনায় জনগণের অংশগ্রহণ ও জনমতের প্রতিফলন ঘটবে? তার মানুষ এর থেকে প্রতিকার চায়। তাদের প্রত্যাশা নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি অনেকটাই ব্যতিক্রম হবে।
দেশে সাংবিধানিক গণতন্ত্র আছে বটে কিন্তু কার্যতএকটা সময় দেশ চলছে কয়েকজন মানুষের ইচ্ছা-অনিচ্ছায়। গণতান্ত্রিক আলোচনা, পর্যালোচনা ও পর্যবেক্ষণ ছাড়া যে রাজনীতি চলেছিল তাতে ব্যক্তিস্বার্থ সিদ্ধি হলেও দেশের স্বার্থসিদ্ধি হবার কোন সুযোগ ছিল না। রাজনীতি আটকে ছিল অদ্ভুত একনায়কতন্ত্রের জালে। যারা বেড়িয়ে আসতে চায় তারাও আটকে যায়। এটাই প্রতিক্রিয়াশীলতা। বাংলাদেশেও যথেষ্ট সমর্থ, মেধাবী, কল্যাণশীল ও দক্ষ লোক আছেন। কিন্তু এদের কোন মূল্যায়ন ছিল। যাদের চিন্তাজগত ক্ষমতাকেন্দ্রীক, ক্ষমতার বাইরে যারা আর কিছু ভাবতেই পারে না তারা কিভাবে অন্যকে মূল্যায়ন করবে? ভেতর-বাহির থেকে ক্ষমতা তাড়া করলে কোন মূল্যবোধইতো বেঁচে থাকে না! তাই ধীরে ধীরে সব কিছু স্বার্থান্বেষীদের দখলে ও নিয়ন্ত্রণে চলে গিয়েছিল। সেখান বেড়িয়ে এসে এখন মানুষ আবার নতুন করে গণতন্ত্রের স্বপ্ন দেখছে।
জনগণ রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে প্রত্যাশা করে প্রগতি। জনগণ চায়, মোটা ভাত ও জীবনের নিরাপত্তা। কিন্তু পূর্বের রাজনৈতিক দলগুলো কি দিয়েছে জনগণকে? দিয়েছে – অস্বস্তি ও উৎকণ্ঠা। পথে পথে লাশ আর লাশ। আন্দোলন করতে গিয়ে মরেছে, না করতে গিয়েও মরেছে। মৃত্যু যেন অবধারিত হয়ে উঠেছিল সর্বত্র। ঘরে-বাইরে কোথাও স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চিয়তা ছিল না। সে সময় বাংলাদেশ ছিল দু’মুখো মরণ ফাঁদের মাঝখানে দাঁড়ানো। পা বাড়ালেও মরণ, পেছালেও মরণ। এখন অবশ্য চিত্রটা ভিন্ন।
তাই দেশের সচেতন নাগরিক মাত্র রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। দেশ যেন একটি অমীমাংসিত রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের দিকে না যায়। এমন কোন সমস্যা নেই যার সমাধান অসম্ভব। কিন্তু সমস্যা সমাধানের দিকে অগ্রসর না হয়ে ক্রমাগত সাংঘর্ষিক অবস্থার দিকে যাওয়া যাবে না। সংকট উত্তরণে রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছা জরুরি। রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকবেই, মতপার্থক্য না থাকলে প্রগতি থেমে যেতো, উত্তরণ থেমে যেতো। এসব মতপার্থক্য থেকে একমতে পৌঁছার পথ অবশ্যই হতে হবে গণতান্ত্রিক।
কিন্তু বিগত সময় আমাদের দেশের বড় দুটি প্রধান দলের মধ্যে রাজনৈতিক ও মানসিক দূরত্ব এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছিল যে, এই দূরত্ব ঘুচে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। তারা একদল আরেক দলের পিছনে সাপে নেওলের সম্পর্ক ছিল। একদিকে বিরোধীদল সাধারণ মানুষকে সাথে না নিয়ে বরং জনগণকে ভোগান্তিতে ফেলে জ্বালাও পোড়াওয়ের নামে আন্দোলন করেছে অন্যদিকে সরকার দল বিরোধীদলকে দমানোর জন্য নেতাকর্মীদের গ্রেফতার এবং যৌক্তিক অযৌক্তিক মামলা দিয়ে জেলে পুড়ে রেখেছিল। জনগণ উভয় দলের ব্যবহারে ক্ষুব্ধ। অথচ এটা তাদের স্মরণে রাখে না যে, দেশের জনগণ তাদের ভোট না দিলে ক্ষমতার মসনদেও বসার সুযোগ হতো না।
স্বাধীনতার প্রায় অর্ধশতক হয়ে এলো অথচ দেশের আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি দিনে দিনে খারাপের দিকে গিয়েছিল। দেশে আলোচিত খুন (ব্লগার, বিদেশী), নারী নির্যাতন, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, সংখ্যালঘুদের জমি দখল এবং উৎখাত, স্বাধীনতার বিপক্ষ দল গুলোর অমানবিক তান্ডব,জঙ্গীবাদ, ধর্ষণ, ক্ষমতাসীন দলের নেতা কর্মীদের উৎপাত চোখে পড়ার মত প্রতিদিন খবরের হেড লাইন (এমপি মন্ত্রী থেকে সাধারণ মাঠ পর্যায়ের কর্মী) প্রশাসন দিনদিন ক্ষমতার জালে আটকে পড়ছে ইত্যাদি ইত্যাদি। এই খারাপ অবস্থার জন্য দেশের রাজনৈতিক দলগুলো একে অপরের ওপর দোষ চাপিয়েছিল। ফলে পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হয়নি। একটি স্বাধীন সার্বভৌম ও গণতান্ত্রিক দেশে এমন অবস্থা কোনোভাবেই মেনে নেওয়ার মত ছিল না। জুলাই আন্দোলনের পূর্ব সময় একদিকে বিরোধী দল যেমন যৌক্তিক সমালোচনা না করে ক্ষমতা লাভের জন্য বিভিন্ন অযৌক্তিক কথা বলেছিল। কখনো এটা বলেনি যে, দেশের মানুষ কি কি সমস্যায় ভুগছে, দেশকে কিভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়, দেশের কোন কোন জায়গায় এখনো ঠিকমত উন্নয়নের ছোঁয়া পৌঁছেনি। সেসময় সরকারের যদি সঠিকভাবে সমালোচনা করতে পারত, দেশের সরকারের যেমন উন্নয়ন করতে সুবিধা হতো, তেমনি বিভিন্ন ভুল ত্রুটি, অনিয়ম সরকারের চোখে পড়ত অন্যদিকে এসবের সমালোচনা করে জনগণের যেমন নজর কাড়া যেত তেমনি বিরোধী দলের যৌক্তিক আন্দোলনে মানুষের সমর্থন পেত। বিরোধীদলের উচিত ছিল বিভিন্ন সরকারের অপকান্ড, দূর্নীতির পাশাপাশি উন্নয়নের দিকগুলো তুলে ধরে সাধারণ মানুষের কাছে খোলাসা করা।
অবাক করার ব্যাপার যে দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট এসব বিষয়ে আন্দোলন না করেই ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য দিশাহারা হয়ে পড়েছিল। এখনো পরিবর্তন হয়নি। কিন্তু একথা ভুলে গেলে চলবে না যে, ভবিষ্যতে ক্ষমতায় যেতে হলে জনসমর্থন নিয়েই যেতে হবে। জনসমর্থন ছাড়া বাংলাদেশে পেশিশক্তির মাধ্যমে বা বন্দুকের নলের জোরে আর ক্ষমতায় যাওয়া সম্ভব নয়। সুতরাং বিরোধী দলের উচিত হবে, প্রথমে নিজের ঘর গোছানো এবং পরে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সরকারের অগণতান্ত্রিক ও জনস্বার্থবিরোধী কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করা। তারপর ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখা উচিত বিরোধী দলের। তাছাড়া বিরোধী দল সরকার দলীয়দের চাপে যেভাবে কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল এখন চিত্র ভিন্ন। এ দেশের খেটে খাওয়া জনগণের মৌলিক চাহিদা যদি কোনো সরকার পূরণ করতে পারে তবে সে জনগণ কেন সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে। কোনো সরকারের দ্বারা জনগণের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটলে, ওই সরকারকে কেউ ক্ষমতাচ্যুতও করতে পারে না। অগণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ক্ষমতা দখল সে তো ভিন্ন বিষয়।
বলাবাহুল্য দেশের জনগণ যে সীমাহীন সমস্যা ও দুর্ভোগের মধ্যে দিন অতিবাহিত করছে এ থেকে তাদের উদ্ধার করার দায়িত্ব রাজনৈতিক নেতৃত্বের, হোন তিনি সরকারি কিংবা বিরোধী দলের। যারা দেশ পরিচালনা করেন কিংবা দিকনির্দেশনা দেন, তাদের সততা, ন্যায়-নিষ্ঠা এবং সুনজর ছাড়া দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে না। জনগণ কেবল পণ্যমূল্যের জাঁতাকলে পিষ্ঠ হবে এবং যানজটে পড়ে আটকে থাকবে। বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি ও কর্মসংস্থান সঙ্কটে পড়বে। তাদের জীবনের নিরাপত্তা পদে পদে বিঘ্নিত হবে। অপরদিকে সরকার যদি জনগণকে দেয়া অঙ্গীকার ভুলে গিয়ে তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত রেখে দাবিদাওয়া উপেক্ষা করে ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার জন্য বিরোধী দল নিশ্চিহ্ন করার চক্রান্তে মেতে থাকে এতে যেমন তাদের জন্য আত্মঘাতী তেমনি দেশ চলে যাবে সংঘাতের মধ্যে। সুতরাং এ বিষয়টিতে সকল রাজনৈতিক দলগুলোর মনোযোগ থাকা জরুরি।
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দেশপ্রেম থাকলে, জনগণের সমস্যা নিজেদের সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে তা সমাধানে এগিয়ে এলে বাংলাদেশের পরিস্থিতি পরিবর্তন হবেই। তাই রাজনৈতিক দলগুলোকে কেবল ক্ষমতায় যাওয়ার মানসিকতা পরিত্যাগ করতে হবে। যে দেশে দুর্নীতি স্বজনপ্রীতি ও দলীয়করণের মহোৎসব চলে, যে দেশে সরকার ও বিরোধী দলের সঙ্গে কোনো সুসম্পর্ক নেই, জাতীয় সংসদ বছরের পর বছর অকার্যকর থাকে, আইনের শাসন নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দেয়, শিল্পবিকাশ বিরোধী নীতির কারণে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয় না, সে দেশে জনস্বার্থ উপেক্ষিত থাকবে এটাই তো স্বাভাবিক। প্রতিটি স্বাধীন দেশের মানুষ দেশের উন্নয়ন চাই । আজকের যুগে উন্নয়ন হলো রাজনীতির মূল হাতিয়ার । উন্নয়ন ছাড়া রাজনীতি অচল । উন্নয়ন চাই ,চাকরি চাই ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা চাই । উন্নয়ন ছাড়া সরকার ও দল চলতে পারে না । দেশে উন্নয়ন নিয়ে চলে নোংরা রাজনীতি । যা খুবই দুর্ভাগ্য আমাদের জন্য।
অপরদিকে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ও যুবলীগ ক্যাডাররা সে সময় দেশে ব্যাপকভাবে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, লুটপাট, টেন্ডারবাজি, হত্যা, ধর্ষণ, ডাকাতি, দখলদারি এবং ব্যাপক অরাজকতা চালিয়েছি। হাসিনা সরকার সেদিকে মোটেই দৃষ্টিপাত করেনি বরং আশ্রয়-প্রশ্রয় ও উস্কানি দিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলেছিল। একথা অনস্বীকার্য যে, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং জনগণের জীবন যাত্রার মান উন্নত করতে হলে গণতন্ত্রের কোনো বিকল্প নেই। আর গণতন্ত্রের ভীতকে মজবুত করতে হলে চাই গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ। গণতান্ত্রিক বিধি ব্যবস্থায় বিরোধী দল বা দলসমূহের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে, গণতন্ত্রকে সমুন্নত রাখতে সংসদীয় বিরোধী দলের ভূমিকা অপরিসীম। গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার ক্ষেত্রে সরকারি দলের ভূমিকা সমধিক গুরুত্বপূর্ণ হলেও বিরোধী রাজনৈতিক দলের ভূমিকাও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।
রাজনীতিকরা যদি মনে করে থাকেন যে দেশের মানুষ তাদের বোলচালে আত্মহারা হয়ে তাদের প্রতি আজীবন আনুগত্য দেখিয়ে যাবে তা হলে ভুল করবেন। দেশের মানুষ অনিচ্ছা সত্ত্বেও অনেক কিছু মেনে নিতে হয়েছিল, মন না চাইলেও অনেক কিছুর সঙ্গেই মানিয়ে চলেছে। কিন্তু এই মেনে নেয়া ও মানিয়ে চলার একটা সীমা ছিল। এ সীমা যখন অতিক্রম করে ঠিক তখনই এদেশের ছাত্র জনতা রুখে দাঁড়িয়েছিল। পরাজিত করে ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে। তারা এখন জনগণকে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখাচ্ছে। যেখানে আদ্যোপান্ত থাকবে না বৈষম্যের ছিটেফোঁটা।
আবু রায়হান মিসবাহ
কবি -লেখক, সম্পাদক, দৈনিক গণমাধ্যম।
সভাপতি প্রার্থী, শ্রীপুর উপজেলা জাতীয় নাগরিক পার্টি।
রাজনীতি হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে কিছু ব্যক্তির সমন্বয়ে গঠিত কোন গোষ্ঠী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। যদত নাগরিক সরকারের রাজনীতিকেই বোঝানো হয়, তবে অন্যান্য অনেক সামাজিক প্রতিষ্ঠান, যেমন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান যেখান মানুষের মধ্যে পারস্পারিক সম্পর্ক বিদ্যমান, সেখানে রাজনীতি চর্চা করা হয়। রাজনীতি কর্তৃত্ব ও ক্ষমতার ভিত্তিতে গঠিত সামাজিক সম্পর্ক নিয়ে গঠিত।
১৯৭১ সালে প্রতিষ্ঠিত এই দেশটির জন্মের ইতিহাস, বিদ্যমান সরকার ব্যবস্থা, আন্তর্জাতিক প্রভাব এবং মানুষের রাজনীতিমনস্কতা কেন্দ্র করে আবর্তিত। বাংলাদেশের সরকার ব্যবস্থা সংসদীয় পদ্ধতির। এই পদ্ধতিতে প্রধানমন্ত্রীর হাতে সরকারের প্রধান ক্ষমতা ন্যস্ত থাকে। বহুদলীয় গণতন্ত্র পদ্ধতিতে এখানে জনগণের সরাসরি ভোটে জাতীয় সংসদের সদস্যরা নির্বাচিত হন। নির্বাহী ক্ষমতা সরকারের হাতে ন্যস্ত। আইন প্রণয়ন করা হয জাতীয় সংসদে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে সামরিক বাহিনীর অংশগ্রহণের সুযোগ না থাকলেও বিভিন্ন সময়ে সেনা শাসন এবং সেনা প্রভাব বাংলাদেশের রাজনীতির গতিপথ নিয়ন্ত্রণ করেছে। ইসলামী শক্তি এবং জঙ্গীবাদী শক্তীর উত্থান কখনো কখনো বাংলাদেশের রাজনীতিকে প্রভাবান্বিত করেছে। রাজনীতির লক্ষ্য গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা এবং জনকল্যাণ। সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার রাজনীতিতে তাদের সরাসরি অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের মানুষ তেমন রাজনীতি সচেতন না। আওয়ামী লীগ-বিএনপি সংঘর্ষ একটা সময় তিক্ত আকার ধারণ করেছিল এবং প্রতিনিয়ত আন্দোলন, সহিংসতা এবং হত্যাকাণ্ডের জন্ম দেয়। অন্যদিকে বাংলাদেশের রাজনীতিবিদরা দুর্নীতিপরায়ণ হওয়ার কারণে সাধারণ মানুষও বেশ হতাশ ছিল। আশার কথা এখন মানুষ পরিবর্তন চায়। মানুষের প্রত্যাশাও তরুণদের নেতৃত্বে গঠিত নতুন রাজনৈতিক দলটির কাছে অনেক।
গণতন্ত্রের মূলভিত্তি জনগণ। যেখানে জনগণের উপস্থিতি নেই, সেখানে কোনোদিন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারে না। বিরোধী দল বা শাসক দলের আস্থা বৃদ্ধির একমাত্র হাতিয়ার জনগণ। জনগণের উপর আস্থা থাকলে বিরোধী দলের আন্দোলন কিংবা শাসক দলের শাসন সবসময় গণমুখী হয়। কিন্তু গণতন্ত্রে জনগণের ঘাটতি মানেই রাজনীতিতে মূল্যবোধের অবক্ষয়। দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত না হলে কোনো উন্নয়ন হবে না। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে সরকারি দলের পাশাপাশি বিরোধী দলকেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। দু’দলকেই দায়িত্বশীল হতে হবে। বিরোধী দল শব্দটি একটি গণতান্ত্রিক শব্দ। আমাদের দেশের মত সংসদীয় গণতান্ত্রিক দেশে এই শব্দটির সাথে আমরা খুবই পরিচিত। একটি গণতান্ত্রিক দেশে বিরোধী দলের ভূমিকা আয়না স্বরূপ। সরকার যখন কোন ক্ষেত্রে লাইনচ্যুত হয় বিরোধী দল চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। দূরদর্শী সরকার হলে এ থেকে শিক্ষা নিয়ে সঠিক পথে চলার চেষ্টা করে এটাই বাস্তবতা এবং একটি আদর্শবাদী সরকারের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
সরকারের অগণতান্ত্রিক, জনগণ ও দেশের জন্য অকল্যাণকর কাজ ও সিদ্ধান্তের সমালোচনা ও সরকারকে পরামর্শ দেয়াই ও সরকারকে সহযোগিতা করাই হল বিরোধী দলের প্রধান দায়িত্ব। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে এর সংজ্ঞা সম্পূর্ণ ভিন্ন। যে দলই সরকারে থাকুক না কেন তাদের অন্যতম এজেন্ডা হয়ে ওঠে বিরোধী দলকে দমন করা। তাদের সাংবিধানিক, রাজনৈতিক অধিকারে হস্তক্ষেপ করা। জেল, জুলুম, অযৌক্তিক, রাজনৈতিক ও হয়রানিমূলক মামলা দ্বারা প্রতিহত করা হয় তাদের যৌক্তিক আন্দোলনকে।
আমরা যদি এই সঙ্কীর্ণতা থেকে নিজেদের মুক্ত করতে না পারি তাহলে নিজেদের উন্নয়ন কখনও সম্ভব নয়। কারণ একটি গণতান্ত্রিক দেশে বিরোধী দলের গুরুত্ব অপরিসীম। বিরোধী দল না থাকলে সরকারের কোনো ভুলই চোখে পড়ে না এবং কোন কাজ সমালোচনাহীনভাবে সুচারুরূপে শেষ হবে না। নয়ত বা, সরকার জনগণ হতে প্রায় সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে এবং একটি গণতান্ত্রিক দেশে জনগণ হতে বিচ্চিন্ন কোনো দলের পক্ষে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা আদৌ সম্ভব নয়।
গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত হচ্ছে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলো এখনও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হিসেবে বিকশিত হতে পারেনি। প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোতে দলীয় সিদ্ধান্ত ছাড়াই, কয়েকজনের সিদ্ধান্ত ও ইচ্ছা অন্ধভাবে সমর্থিত হয়। অন্ধ সমর্থন এবং সমর্থন বিষয়ক অন্ধতা দেশে গণতন্ত্রের বিকাশের পথকে রুদ্ধ করছে। রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতরে গণতন্ত্রের অনুশীলন নেই। দলের মধ্যে যারা আছেন তাদের ভিন্নমতই যেখানে গ্রহণযোগ্য নয় সেখানে দলের বাহির থেকে যেসব উপদেশ ও সমালোচনা করা হয় তা গ্রহণযোগ্য হবে কি করে? কিভাবে রাষ্ট্র পরিচালনায় জনগণের অংশগ্রহণ ও জনমতের প্রতিফলন ঘটবে? তার মানুষ এর থেকে প্রতিকার চায়। তাদের প্রত্যাশা নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি অনেকটাই ব্যতিক্রম হবে।
দেশে সাংবিধানিক গণতন্ত্র আছে বটে কিন্তু কার্যতএকটা সময় দেশ চলছে কয়েকজন মানুষের ইচ্ছা-অনিচ্ছায়। গণতান্ত্রিক আলোচনা, পর্যালোচনা ও পর্যবেক্ষণ ছাড়া যে রাজনীতি চলেছিল তাতে ব্যক্তিস্বার্থ সিদ্ধি হলেও দেশের স্বার্থসিদ্ধি হবার কোন সুযোগ ছিল না। রাজনীতি আটকে ছিল অদ্ভুত একনায়কতন্ত্রের জালে। যারা বেড়িয়ে আসতে চায় তারাও আটকে যায়। এটাই প্রতিক্রিয়াশীলতা। বাংলাদেশেও যথেষ্ট সমর্থ, মেধাবী, কল্যাণশীল ও দক্ষ লোক আছেন। কিন্তু এদের কোন মূল্যায়ন ছিল। যাদের চিন্তাজগত ক্ষমতাকেন্দ্রীক, ক্ষমতার বাইরে যারা আর কিছু ভাবতেই পারে না তারা কিভাবে অন্যকে মূল্যায়ন করবে? ভেতর-বাহির থেকে ক্ষমতা তাড়া করলে কোন মূল্যবোধইতো বেঁচে থাকে না! তাই ধীরে ধীরে সব কিছু স্বার্থান্বেষীদের দখলে ও নিয়ন্ত্রণে চলে গিয়েছিল। সেখান বেড়িয়ে এসে এখন মানুষ আবার নতুন করে গণতন্ত্রের স্বপ্ন দেখছে।
জনগণ রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে প্রত্যাশা করে প্রগতি। জনগণ চায়, মোটা ভাত ও জীবনের নিরাপত্তা। কিন্তু পূর্বের রাজনৈতিক দলগুলো কি দিয়েছে জনগণকে? দিয়েছে – অস্বস্তি ও উৎকণ্ঠা। পথে পথে লাশ আর লাশ। আন্দোলন করতে গিয়ে মরেছে, না করতে গিয়েও মরেছে। মৃত্যু যেন অবধারিত হয়ে উঠেছিল সর্বত্র। ঘরে-বাইরে কোথাও স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চিয়তা ছিল না। সে সময় বাংলাদেশ ছিল দু’মুখো মরণ ফাঁদের মাঝখানে দাঁড়ানো। পা বাড়ালেও মরণ, পেছালেও মরণ। এখন অবশ্য চিত্রটা ভিন্ন।
তাই দেশের সচেতন নাগরিক মাত্র রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। দেশ যেন একটি অমীমাংসিত রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের দিকে না যায়। এমন কোন সমস্যা নেই যার সমাধান অসম্ভব। কিন্তু সমস্যা সমাধানের দিকে অগ্রসর না হয়ে ক্রমাগত সাংঘর্ষিক অবস্থার দিকে যাওয়া যাবে না। সংকট উত্তরণে রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছা জরুরি। রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকবেই, মতপার্থক্য না থাকলে প্রগতি থেমে যেতো, উত্তরণ থেমে যেতো। এসব মতপার্থক্য থেকে একমতে পৌঁছার পথ অবশ্যই হতে হবে গণতান্ত্রিক।
কিন্তু বিগত সময় আমাদের দেশের বড় দুটি প্রধান দলের মধ্যে রাজনৈতিক ও মানসিক দূরত্ব এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছিল যে, এই দূরত্ব ঘুচে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। তারা একদল আরেক দলের পিছনে সাপে নেওলের সম্পর্ক ছিল। একদিকে বিরোধীদল সাধারণ মানুষকে সাথে না নিয়ে বরং জনগণকে ভোগান্তিতে ফেলে জ্বালাও পোড়াওয়ের নামে আন্দোলন করেছে অন্যদিকে সরকার দল বিরোধীদলকে দমানোর জন্য নেতাকর্মীদের গ্রেফতার এবং যৌক্তিক অযৌক্তিক মামলা দিয়ে জেলে পুড়ে রেখেছিল। জনগণ উভয় দলের ব্যবহারে ক্ষুব্ধ। অথচ এটা তাদের স্মরণে রাখে না যে, দেশের জনগণ তাদের ভোট না দিলে ক্ষমতার মসনদেও বসার সুযোগ হতো না।
স্বাধীনতার প্রায় অর্ধশতক হয়ে এলো অথচ দেশের আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি দিনে দিনে খারাপের দিকে গিয়েছিল। দেশে আলোচিত খুন (ব্লগার, বিদেশী), নারী নির্যাতন, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, সংখ্যালঘুদের জমি দখল এবং উৎখাত, স্বাধীনতার বিপক্ষ দল গুলোর অমানবিক তান্ডব,জঙ্গীবাদ, ধর্ষণ, ক্ষমতাসীন দলের নেতা কর্মীদের উৎপাত চোখে পড়ার মত প্রতিদিন খবরের হেড লাইন (এমপি মন্ত্রী থেকে সাধারণ মাঠ পর্যায়ের কর্মী) প্রশাসন দিনদিন ক্ষমতার জালে আটকে পড়ছে ইত্যাদি ইত্যাদি। এই খারাপ অবস্থার জন্য দেশের রাজনৈতিক দলগুলো একে অপরের ওপর দোষ চাপিয়েছিল। ফলে পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হয়নি। একটি স্বাধীন সার্বভৌম ও গণতান্ত্রিক দেশে এমন অবস্থা কোনোভাবেই মেনে নেওয়ার মত ছিল না। জুলাই আন্দোলনের পূর্ব সময় একদিকে বিরোধী দল যেমন যৌক্তিক সমালোচনা না করে ক্ষমতা লাভের জন্য বিভিন্ন অযৌক্তিক কথা বলেছিল। কখনো এটা বলেনি যে, দেশের মানুষ কি কি সমস্যায় ভুগছে, দেশকে কিভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়, দেশের কোন কোন জায়গায় এখনো ঠিকমত উন্নয়নের ছোঁয়া পৌঁছেনি। সেসময় সরকারের যদি সঠিকভাবে সমালোচনা করতে পারত, দেশের সরকারের যেমন উন্নয়ন করতে সুবিধা হতো, তেমনি বিভিন্ন ভুল ত্রুটি, অনিয়ম সরকারের চোখে পড়ত অন্যদিকে এসবের সমালোচনা করে জনগণের যেমন নজর কাড়া যেত তেমনি বিরোধী দলের যৌক্তিক আন্দোলনে মানুষের সমর্থন পেত। বিরোধীদলের উচিত ছিল বিভিন্ন সরকারের অপকান্ড, দূর্নীতির পাশাপাশি উন্নয়নের দিকগুলো তুলে ধরে সাধারণ মানুষের কাছে খোলাসা করা।
অবাক করার ব্যাপার যে দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট এসব বিষয়ে আন্দোলন না করেই ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য দিশাহারা হয়ে পড়েছিল। এখনো পরিবর্তন হয়নি। কিন্তু একথা ভুলে গেলে চলবে না যে, ভবিষ্যতে ক্ষমতায় যেতে হলে জনসমর্থন নিয়েই যেতে হবে। জনসমর্থন ছাড়া বাংলাদেশে পেশিশক্তির মাধ্যমে বা বন্দুকের নলের জোরে আর ক্ষমতায় যাওয়া সম্ভব নয়। সুতরাং বিরোধী দলের উচিত হবে, প্রথমে নিজের ঘর গোছানো এবং পরে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সরকারের অগণতান্ত্রিক ও জনস্বার্থবিরোধী কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করা। তারপর ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখা উচিত বিরোধী দলের। তাছাড়া বিরোধী দল সরকার দলীয়দের চাপে যেভাবে কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল এখন চিত্র ভিন্ন। এ দেশের খেটে খাওয়া জনগণের মৌলিক চাহিদা যদি কোনো সরকার পূরণ করতে পারে তবে সে জনগণ কেন সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে। কোনো সরকারের দ্বারা জনগণের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটলে, ওই সরকারকে কেউ ক্ষমতাচ্যুতও করতে পারে না। অগণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ক্ষমতা দখল সে তো ভিন্ন বিষয়।
বলাবাহুল্য দেশের জনগণ যে সীমাহীন সমস্যা ও দুর্ভোগের মধ্যে দিন অতিবাহিত করছে এ থেকে তাদের উদ্ধার করার দায়িত্ব রাজনৈতিক নেতৃত্বের, হোন তিনি সরকারি কিংবা বিরোধী দলের। যারা দেশ পরিচালনা করেন কিংবা দিকনির্দেশনা দেন, তাদের সততা, ন্যায়-নিষ্ঠা এবং সুনজর ছাড়া দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে না। জনগণ কেবল পণ্যমূল্যের জাঁতাকলে পিষ্ঠ হবে এবং যানজটে পড়ে আটকে থাকবে। বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি ও কর্মসংস্থান সঙ্কটে পড়বে। তাদের জীবনের নিরাপত্তা পদে পদে বিঘ্নিত হবে। অপরদিকে সরকার যদি জনগণকে দেয়া অঙ্গীকার ভুলে গিয়ে তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত রেখে দাবিদাওয়া উপেক্ষা করে ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার জন্য বিরোধী দল নিশ্চিহ্ন করার চক্রান্তে মেতে থাকে এতে যেমন তাদের জন্য আত্মঘাতী তেমনি দেশ চলে যাবে সংঘাতের মধ্যে। সুতরাং এ বিষয়টিতে সকল রাজনৈতিক দলগুলোর মনোযোগ থাকা জরুরি।
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দেশপ্রেম থাকলে, জনগণের সমস্যা নিজেদের সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে তা সমাধানে এগিয়ে এলে বাংলাদেশের পরিস্থিতি পরিবর্তন হবেই। তাই রাজনৈতিক দলগুলোকে কেবল ক্ষমতায় যাওয়ার মানসিকতা পরিত্যাগ করতে হবে। যে দেশে দুর্নীতি স্বজনপ্রীতি ও দলীয়করণের মহোৎসব চলে, যে দেশে সরকার ও বিরোধী দলের সঙ্গে কোনো সুসম্পর্ক নেই, জাতীয় সংসদ বছরের পর বছর অকার্যকর থাকে, আইনের শাসন নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দেয়, শিল্পবিকাশ বিরোধী নীতির কারণে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয় না, সে দেশে জনস্বার্থ উপেক্ষিত থাকবে এটাই তো স্বাভাবিক। প্রতিটি স্বাধীন দেশের মানুষ দেশের উন্নয়ন চাই । আজকের যুগে উন্নয়ন হলো রাজনীতির মূল হাতিয়ার । উন্নয়ন ছাড়া রাজনীতি অচল । উন্নয়ন চাই ,চাকরি চাই ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা চাই । উন্নয়ন ছাড়া সরকার ও দল চলতে পারে না । দেশে উন্নয়ন নিয়ে চলে নোংরা রাজনীতি । যা খুবই দুর্ভাগ্য আমাদের জন্য।
অপরদিকে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ও যুবলীগ ক্যাডাররা সে সময় দেশে ব্যাপকভাবে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, লুটপাট, টেন্ডারবাজি, হত্যা, ধর্ষণ, ডাকাতি, দখলদারি এবং ব্যাপক অরাজকতা চালিয়েছি। হাসিনা সরকার সেদিকে মোটেই দৃষ্টিপাত করেনি বরং আশ্রয়-প্রশ্রয় ও উস্কানি দিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলেছিল। একথা অনস্বীকার্য যে, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং জনগণের জীবন যাত্রার মান উন্নত করতে হলে গণতন্ত্রের কোনো বিকল্প নেই। আর গণতন্ত্রের ভীতকে মজবুত করতে হলে চাই গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ। গণতান্ত্রিক বিধি ব্যবস্থায় বিরোধী দল বা দলসমূহের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে, গণতন্ত্রকে সমুন্নত রাখতে সংসদীয় বিরোধী দলের ভূমিকা অপরিসীম। গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার ক্ষেত্রে সরকারি দলের ভূমিকা সমধিক গুরুত্বপূর্ণ হলেও বিরোধী রাজনৈতিক দলের ভূমিকাও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।
রাজনীতিকরা যদি মনে করে থাকেন যে দেশের মানুষ তাদের বোলচালে আত্মহারা হয়ে তাদের প্রতি আজীবন আনুগত্য দেখিয়ে যাবে তা হলে ভুল করবেন। দেশের মানুষ অনিচ্ছা সত্ত্বেও অনেক কিছু মেনে নিতে হয়েছিল, মন না চাইলেও অনেক কিছুর সঙ্গেই মানিয়ে চলেছে। কিন্তু এই মেনে নেয়া ও মানিয়ে চলার একটা সীমা ছিল। এ সীমা যখন অতিক্রম করে ঠিক তখনই এদেশের ছাত্র জনতা রুখে দাঁড়িয়েছিল। পরাজিত করে ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে। তারা এখন জনগণকে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখাচ্ছে। যেখানে আদ্যোপান্ত থাকবে না বৈষম্যের ছিটেফোঁটা।
মন্তব্য করুন