
প্রকাশিত: ২১ ঘন্টা আগে, ০১:৩০ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ও নানা রাজনৈতিক অমীমাংসিত ইস্যুর মধ্যে আজ লন্ডনে সাক্ষাৎ হচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এটি হবে দুজনের প্রথম বৈঠক। গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার ও নির্বাচনের সময়সহ বহু অমীমাংসিত বিষয় সামনে রেখে এ বৈঠককে খুবই গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হচ্ছে।
ডরচেস্টার হোটেলে লন্ডনের স্থানীয় সময় সকাল ৯টায় (বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টা) শুরু হবে এ বৈঠক। কতক্ষণ আলোচনা চলবে, তা নির্দিষ্ট নয়। সরকারি ও বিএনপি সূত্র জানায়, দুই নেতার একান্ত বৈঠকের পাশাপাশি উভয়পক্ষের আরও কয়েকজন শীর্ষ নেতা উপস্থিত থাকতে পারেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ইতিমধ্যে লন্ডনে পৌঁছেছেন।
বৈঠক শেষে বিএনপির পক্ষ থেকে লন্ডনে আমীর খসরু মাহমুদ ব্রিফিং করতে পারেন বলেও জানা গেছে।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে লন্ডনে অবস্থানরত তার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বৃহস্পতিবার এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন, ‘একটা ওয়ান টু ওয়ান মিটিং হবে। এ ক্ষেত্রে উনারা (ইউনূস ও তারেক) যদি মনে করেন আরও কেউ থাকবেন, সেটা দুই লিডারই ডিসাইড করবেন।’
বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপির দিক থেকে কী কী বিষয়ে আলোচনা হবে, সে সম্পর্কে তারেক রহমানকে দলের স্থায়ী কমিটির পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে কিছু মতামত দেওয়া হয়েছে।
এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, নির্বাচনের সময়। প্রধান উপদেষ্টা ঈদুল আজহার আগের দিন জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে আগামী বছরের এপ্রিলের প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচনের যে ঘোষণা দিয়েছেন, লন্ডন বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে সে ‘সময়সীমা’ পুনর্বিবেচনা করার অনুরোধ জানানো হবে।
এ ক্ষেত্রে বিএনপি ডিসেম্বরের আগে নির্বাচনের দাবি থেকে কিছুটা সরে আসবে, যাতে সরকার আরেকটু এগিয়ে আসে। বিএনপি মনে করে, এপ্রিল মাস ভোটের জন্য উপযোগী সময় নয়। কারণ এই সময়ে প্রচণ্ড গরম আবহাওয়া থাকে, ঝড়বৃষ্টির আশঙ্কা থাকে। তার আগ দিয়ে রোজা ও ঈদুল ফিতর।
এমন সময়ে ভোট করতে গেলে রমজান মাসেও নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে হবে। তাই বিএনপি আশা করে সরকার ভোটের সময় এগিয়ে আনার বিষয়টি বিবেচনায় নেবে। তবে সরকার এপ্রিলে অনড় থাকলে বিএনপির পক্ষে মানা কঠিন হবে।
এ ছাড়া আরও দুটি বিষয় এই বৈঠকে আসতে পারে বলে জানা গেছে। একটি হচ্ছে, সরকার থেকে বিতর্কিত উপদেষ্টাদের বাদ দেওয়া। সরকারের তিনজন উপদেষ্টার ব্যাপারে বিএনপি এর আগে যে আপত্তি জানিয়েছিল, সে বিষয়টি এ বৈঠকেও তুলতে পারেন দলের শীর্ষ নেতা।
কারণ, বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা মনে করেন, নির্বাচনে অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা বজায় রাখার স্বার্থে বিতর্কিত উপদেষ্টাদের অব্যাহতি দেওয়া উচিত।
অপর বিষয়টি হলো; সরকার ও প্রশাসনে থাকা বিগত স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের সুবিধাভোগী বা দোসরদের দায়িত্ব থেকে সরানো। এ ছাড়া বিএনপির নেতারা ধারণা করেন, বহুল আলোচিত ‘সংস্কার’ প্রসঙ্গ বৈঠকে উঠতে পারে।
তবে বিএনপির শীর্ষ নেতা নিজ থেকে এটি আলোচনায় তুলবেন না। প্রধান উপদেষ্টার দিক থেকে যদি সংস্কারের কোনো বিষয় আলোচনায় তোলা হয়, সে ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা ইতিমধ্যে দলের স্থায়ী কমিটির পক্ষ থেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে দেওয়া হয়েছে।
যদিও সরকারের দিক থেকে বৈঠকে কী কী বিষয় আলোচনায় প্রাধান্য পেতে পারে, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্বে থাকা তরুণদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতারা মনে করেন, মৌলিক সংস্কার ও জুলাই আন্দোলনে নির্বিচার মানুষ হত্যার বিচারের মতো বিষয়গুলো বৈঠকে বেশি গুরুত্ব পাবে।
ফলে নির্বাচন, সংস্কার ও জুলাই ঘোষণাসহ নানাবিধ কারণে সরকার ও বিএনপির দুই শীর্ষ নেতার এই বৈঠক ঘিরে সব মহলে বেশ কৌতূহল তৈরি হয়েছে।
অবশ্য প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম গতকাল ভিডিও বার্তায় বলেছেন, এই বৈঠকের নির্দিষ্ট কোনো আলোচ্যসূচি নেই। উনারা (অধ্যাপক ইউনূস-তারেক রহমান) যখন বসবেন, তখন বাংলাদেশের এই সময়ের যেকোনো বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।
আলোচনায় বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আগামী জাতীয় নির্বাচন, জুলাই চার্টার (জুলাই সনদ)—এগুলোর যেকোনো বিষয়ে আলাপ হতে পারে। বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য বৈঠকটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বিএনপির দিক থেকেও এ বৈঠককে এ সময়ের সবচেয়ে বড় ‘পলিটিক্যাল ইভেন্ট’ হিসেবে অভিহিত করেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ বৈঠকে নতুন একটা দিগন্তের উন্মোচন হতে পারে বলেও তিনি মনে করেন।
অন্যদিকে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সাংবাদিকদের বলেছেন, তিনি বিশ্বাস করেন, এটি হবে ঐতিহাসিক বৈঠক এবং এ বৈঠকের মাধ্যমে দেশের রাজনীতিতে সুবাতাস বইবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস চার দিনের সফরে গত মঙ্গলবার যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে পৌঁছান। এর আগেই মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সম্ভাব্য সাক্ষাতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে বিএনপি ও সরকারি সূত্র।
রাজনৈতিক মহল এই সাক্ষাৎ বা বৈঠককে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। বৈঠক ফলপ্রসূ হলে নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়, গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার এবং জুলাই সনদসহ আরও অনেক বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার ও বিএনপির মধ্যে যে দূরত্ব বা মতবিরোধ সৃষ্টি হয়েছে, সেটা কমে আসতে পারে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ গতকাল রাতে বলেন, ‘দেশের সরকারপ্রধান এবং দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের প্রধানের মধ্যে বৈঠকটি হচ্ছে। আমরা আশা করি এবং জাতিরও প্রত্যাশা, এই বৈঠকে জাতির জন্য দিকনির্দেশনামূলক এবং ভবিষ্যৎ রাষ্ট্র পরিচালনার ব্যাপারে ইতিবাচক ও যৌক্তিক সিদ্ধান্ত আসবে।’
মন্তব্য করুন