
প্রকাশিত: ৫ ঘন্টা আগে, ০৩:৩৬ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
দেশের বেসরকারি মেডিকেল কলেজ সমূহের মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ এসোসিয়েশন (বিপিএমসিএ)।২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এই সংগঠন জয়েন্ট স্টক কোম্পানীতে রেজিষ্ট্রেশন পায় ২০১০ সালে। প্রতিষ্ঠার পর বিগত ১৫ বছরে এই সংগঠনে অফিসধারী (অফিস বেয়ারার) নির্বাচনের জন্য কোন নির্বাচন হয়নি। সব সময় সিলেকশনের মাধ্যমে কতিপয় পদবীধারীরা পদে আসীন হয়েছেন। বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটি ২০২৩-২০২৪ মেয়াদের জন্য দায়িত্ব গ্রহণ করলেও যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে না পেরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য সংগঠন অনুবিভাগে আবেদন করলে ২ নভেম্বর ২০২৪ হতে ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত তিন (৩) মাসের সময় বৃদ্ধি করা হয়। উক্ত তিন সামের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানে বর্থ হয়ে আবারো সময় বৃদ্ধির আবেদন করলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আরও ছয় (৬) মাস সময় বৃদ্ধি করে। বাণিজ্য সংগঠন আইন ২০২২ এর ১৪ ধারা অনুযায়ী ছয় (৬) মাস সময় মঞ্জুরের বিধান থাকলেও দুই দফায় মোট নয় (৯) মাস সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে, যা আইনের পরিপন্থি।
বর্তমানে ঘোষিত তফসিল অনুযায়ি ১৬ জুলাই ২০২৫ বুধবার নির্বাচন তহওয়ার কথা। দুইটি প্যানেল এই নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করছে। ২১ সদস্য বিশিষ্ট কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচনে একটি প্যানেল প্রতিদ্বন্দিতা করছেন যেখানে বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটির ১৩ জন রয়েছেন। এই প্যানেলে প্রতিদ্বন্দিতাকারীগণ অতীতের অন্যান্য কার্যনির্বাহী কমিটিতেও বিভিন্ন সময়ে দায়িত্ব পালন করেছেন। পক্ষান্তরে অপর প্যানেলটি যাদের নিয়ে গঠিত হয়েছে, তারা অতীতে কখনও কার্যনির্বাহী কমিটিতে দায়িত্ব পালন করেন নি। তাই এই নির্বাচন হতে যাচ্ছে বর্তমানে ক্ষমতাসীন ও অতীতে ক্ষমতায় আসীনদের সাথে যারা ক্ষমতায় ছিলেন না এমন এক ঝাঁক নতুন প্রার্থীর। ক্ষমতাসীন প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী অধ্যাপক ডা. মো. মোয়াজ্জেম হোসেন বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটির সাধারণ সম্পাদক। এছাড়াও তিনি ২০১০-২০১২, ২০১২-২০১৪ ও ২০১৪-২০১৬ মেয়াদে তিন টার্ম সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। অর্থ সম্পাদক পদপ্রার্থী মোঃ হাবিবুল হক বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটিরও অর্থ সম্পাদক। এর আগের ২০২১-২০২২ মেয়াদেও তিনি অর্থ সম্পাদক ছিলেন। এ ছাড়াও তিনি ২০১০-২০১২, ২০১২-২০১৪, ২০১৪-২০১৬, ২০১৬-২০১৮ ও ২০১৮-২০২০ মোট পাঁচ মেয়াদে সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। সহ-সভাপতি পদপ্রার্থী ডা. মোস্তাফিজুর রহমানও বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটিতে সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন। সহ-সভাপতি পদপ্রার্থী ডা. গাজী মিজানুর রহমান বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটিতে যুগ্ম সম্পাদক। এর আগে ২০২১-২০২২ মেয়াদেও তিনি ছিলেন যুগ্ম সম্পাদক আর আইন বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ২০১২-২০১৪, ২০১৪-২০১৬ ও ২০১৬-২০১৮ মোট তিন মেয়াদে। সহ-সভাপতি পদপ্রার্থী সৈয়দ মোঃ মোরশেদ হোসেন বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটিতে যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে আসীন। যুগ্ম সম্পাদক পদপ্রার্থী নিলু আহসান বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটিতে শিক্ষা, সংস্কৃতি ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক। এর আগেও তিনি এই পদে দায়িত্বে আসীন ছিলেন ২০১০-২০১২, ২০১২-২০১৪, ২০১৪-২০১৬ ও ২০১৬-২০১৮ মোট চার মেয়াদে। তার স্বামী মোঃ নাজমুল আহসান সরকার আরেকটি যুগ্ম সম্পাদক পদপ্রার্থী ও বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটিতেও যুগ্ম সম্পাদক পদে আসীন। এর আগে ২০২১-২০২২ মেয়াদেও তিনি ছিলেন যুগ্ম সম্পাদক এবং ২০১০-২০১২, ২০১২-২০১৪, ২০১৪-২০১৬ মোট তিন মেয়াদে বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।
এ ব্যাপারে বেসরকারি মেডিকেল কলেজের কয়েকজন মালিক জানান যে অতীতে মুষ্টিমেয় সুবিধাভোগী সংগঠনের দায়িত্বে থেকে সংগঠনের সাধারণ সদস্যদের জন্য বলতে গেলে কিছুই করেনি। উপরন্তু তারা বিভিন্ন সময়ে চাপ সৃষ্টি করে সদস্যদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করেছে মন্ত্রীসহ অন্যান্যদের ঘুষ দেবার নাম করে। এই ঘুষ বাণিজ্যের ফলে তারা ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হয়েছে অথচ সাধারণ সদস্যরা এখনো ভুগছে বিভিন্ন সমস্যায়। এ বছরও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে সিট ফাঁকা গেছে ৪৬৭ টি। সরকার বাধ্য করেছে বেসরকারি মেডিকেল কলেজকে ভর্তির ফিস কিস্তিতে নিতে। অথচ বর্তমানে ক্ষমতায় থাকা নেতৃবৃন্দ তার কোন প্রতিকার করতে ব্যর্থ হয়েছেন।
ক্ষমতায় থেকে লাভবান হওয়ার প্রকৃষ্ট উদাহরণ মেডিকেল কলেজের সিট সংখ্যা। যেহেতু বেসরকারি মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা ফিসের টাকায় চলে, তাই বেশি সিট বেশি রোজগার, বেশি স্বাচ্ছন্দ। অধ্যাপক ডা. মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেনের মালিকানাধীন ইষ্ট ওয়েষ্ট মেডিকেল কলেজ ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত আর সিট সংখ্যা ১২৭। মোঃ হাবিবুল হকের মালিকানাধীন তায়রুন্নেছা মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠিত ২০০১ সালে আর সিট সংখ্যা ১০৭। ডা. মোস্তাফিজুর রহমানের মালিকানাধীন পপুলার মেডিকেল কলেজ ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও ১০৫। ডা. গাজী মিজানুর রহমানের মালিকানাধীন গাজী মেডিকেল কলেজ ২০১২ সালে স্থাপিত হলেও সিট সংখ্যা ১০০। সৈয়দ মোঃ মোরশেদ হোসেনের চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল মেডিকেল কলেজ ২০০৬ সালে স্থাপিত ও সিট সংখ্যা ১১৫। নিলু আহসান ও নাজমুল আহসান সরকার দম্পতির মালিকানাধীন রংপুর কমিবুনিটি মেডিকেল কলেজ স্থাপিত ২০০৮ সালে আর সিট সংখ্যা ১১৫।
দেখা যাচ্ছে, ২০০০ সাল থেকে ২০১২ সময়ের মাঝে স্থাপিত বিভিন্ন বেসরকারি মেডিকেল কলেজ সিট সংখ্যা ১০০ থেকে ১৩৫ পর্যন্ত। পক্ষান্তরে ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত গণস্বাস্থ্য সমাজ ভিত্তিক মেডিকেল কলেজের সিট সংখ্যা ৫০; ১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত ইনস্টিটিউট অফ অ্যাপ্লাইড হেলথ সায়েন্সের সিট সংখ্যা ৮০ আর ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত মেডিকেল কলেজ ফর উইমেন্স এর সিট সংখ্যা ৯৫। ক্ষমতাসীনদের কি দারুন সুযোগ!
কাকে ভোট দিবেন এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাকার একটি মেডিকেল কলেজের মালিক জানান চব্বিশের বিপ্লবোত্তর বাংলাদেশে পুরানো ক্ষমতাশীলদের কোন জায়গা নেই। নতুন বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেবে নতুনেরা। একই পুনরাবৃত্তি ঘটবে বিপিএমসিএ’র নির্বাচনেও। পুরনোরা প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে পারেনি তাই সময় হয়েছে নতুনদের জায়গা ছেড়ে দেবার।
চট্টগ্রামের আরেকজন ভোটার ও মেডিকেল কলেজের মালিক জানান ক্ষমতাসীনদের ভরাডুবি হবে এবারের নির্বাচনে।
মন্তব্য করুন