
প্রকাশিত: ৪ ঘন্টা আগে, ০৮:৩৫ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ
গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার বারাব গ্রামে এক যুবকের মৃত্যু ঘিরে ছড়িয়ে পড়েছে উত্তেজনা, সংশয় আর রাজনীতির রঙ। হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি বিয়েবাড়িতে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনার জেরে ৩২ বছর বয়সী রুবেল মিয়ার মৃত্যু এখন শুধু একটি পারিবারিক শোক নয়—এটি হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার ও প্রতিপক্ষকে দমন করার হাতিয়ার।
নিহত রুবেল মিয়া বারিষাব ইউনিয়নের বারাব গ্রামের চাঁন মিয়ার ছেলে। গত মঙ্গলবার রাতে গ্রামের একটি বিয়েবাড়িতে অংশ নেন তিনি। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী, রুবেল ছিলেন নেশাগ্রস্ত এবং সেখানে অশোভন আচরণ শুরু করলে স্বেচ্ছাসেবকরা বাধা দেন। একপর্যায়ে তাকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হয়। স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, সে সময় তার শরীরে জ্বর ছিল এবং মুখ থেকে মদের গন্ধ আসছিল।
এ ঘটনার তিন দিন পর অসুস্থ হয়ে পড়লে রুবেলকে গাজীপুর সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) রাত আটটার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। পরদিন নিহতের মা ফাতেমা বেগম কাপাসিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় নাম উল্লেখ করা হয়েছে ১২ জনের। পুলিশ ইতোমধ্যে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
তবে এ ঘটনা ঘিরে শুরু হয়েছে নানা বিতর্ক। স্থানীয় অনেকেই বলছেন, রুবেল দীর্ঘদিন ধরে মাদকাসক্ত ছিলেন এবং তিনি পুরোনো একটি রোগে ভুগছিলেন, তার কাশির সাথে সাথে নাক দিয়ে মুখ দিয়ে রক্ত আসতো, সে চিকিৎসা নিতেই হাসপাতালে যায়, এটি একটি ‘স্বাভাবিক মৃত্যু’। একে ‘হত্যা’ হিসেবে প্রচার করে একটি মহল রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চাইছে। তাই স্বাভাবিক মৃত্যুকে হত্যা বলে সাজানো মামলা করে গ্রামের অনেককেই হয়রানি করা হচ্ছে।
বিশ্বস্ত সূত্র বলছে, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আমানত উল্লাহ্ ভুক্তভোগী পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন এবং মামলাকে হত্যা হিসেবে প্রতিষ্ঠা দিতে সক্রিয়ভাবে ভূমিকা রাখছেন। তাদের অভিযোগ, সাধারণ অসুস্থতাজনিত একটি মৃত্যুতে অজুহাত দাঁড় করিয়ে মামলার মাধ্যমে প্রতিপক্ষকে হয়রানি করার অপচেষ্টা চলছে।
স্থানীয় রাজনীতিতে এই ঘটনার রেশ পড়ে গেছে স্পষ্টভাবে। মামলায় নাম থাকা কয়েকজন অভিযুক্ত বিরোধী রাজনৈতিক বলয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত। নিহত রুবেল সেচ্ছাসেবকলীগ করতো বলে বিএনপির লোকজনকে মামলায় ফাঁসিয়ে রাজনৈতিক রুপ দেয়া হচ্ছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের এই প্রবণতা প্রশ্নের মুখে ফেলেছে সুষ্ঠু বিচার প্রক্রিয়া। রাজনৈতিক পক্ষপাত কিংবা প্রতিহিংসার ভিত্তিতে দায়ের করা মামলাগুলো কেবল নিরীহ নাগরিককে হয়রানি করেই থেমে থাকে না, বিচার ব্যবস্থার ওপরও ফেলতে পারে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব।
ময়নাতদন্ত রিপোর্ট এখনো আসেনি। তবে এর আগেই একটি নির্দিষ্ট কৌশলে ঘটনাকে ‘হত্যা’ হিসেবে চিত্রায়নের প্রচেষ্টা বহু প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। কাপাসিয়াবাসী তাই এখন এক অদ্ভুত দ্বন্দ্বে—একদিকে মৃত্যুজনিত স্বজনহারা পরিবার, অন্যদিকে রাজনৈতিক সমীকরণে তোলা মামলা। সত্য উদঘাটনের আগেই যেভাবে পরিস্থিতি রাজনৈতিক দিকে মোড় নিয়েছে, তা কাপাসিয়ার মানুষের জন্য অশনি সংকেত বলেই মনে করছেন সচেতন মহল।
কাপাসিয়া থানার ওসি আবদুল বারিক বলেন, “বাদী পক্ষ নাম উল্লেখ করে অভিযোগ করেছেন। একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তদন্তে যদি কারও নির্দোষ প্রমাণ মেলে, তাদেরকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে।”
মন্তব্য করুন